একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের নামে ‘তামাশা হয়েছে দাবি করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, প্রমাণিত হল যে বাংলাদেশে দলীয় সরকার রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর নয়। ভোটগ্রহণের মাঝপথে রোববার দুপুরে কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ায় অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচনের পরিস্থিতি তুলে ধরে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ইসিতে অভিযোগ দিয়ে আলাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের নামে এই তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল না বলে এখন আমাদের মনে হচ্ছে।রাষ্ট্রপতি একটা গেজেট দিলেই হত যে নৌকা ২৯৯ আসন বা দুইশ সাড়ে নিরানব্বই আসন পেয়ে গেছে। এমনটা করলেও অবার হওয়ার কিছু থাকত না।
আশঙ্কাটাই এখন সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। আলাল বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত ও বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি জাগরণ এসেছিল। কিন্তু যেদিন আমরা দেখলাম নির্বাচনী ইতিহাসের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে জানানো হলো যে, নির্বাচনের দিন সব হাসপাতাল, ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সকে স্ট্যান্ডবাই রাখার জন্য। সেদিনই আমরা ভেবেছিলাম বোধহয় নির্বাচনটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেটা আগেই জেনেছিলেন। জেনেই উনি ভোটারদের সতর্ক করেছিলেন। ওনার সেই আশঙ্কাটাই এখন সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে কথাগুলো বার বার বলছিলাম, যেগুলো গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, ব্যালট পেপারে আগেই সিল মারা হবে, কোথাও কোথাও আগেই ব্যালটবাক্স ভরে রাখা হবে, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে দূরে রাখা হবে, সেই চিত্রই কিন্তু আমরা দেখছি এবং আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো।
আলাল আরো বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বিশেষ করে বলবো। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ভুল করা হবে। অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি পিছিয়ে যাবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে। তাই আমরা পরিপূর্ণ উদ্যমে অংশগ্রহণ করে বাধাগ্রস্ত হয়ে দেখালাম দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
দলীয় সরকারের অধীনে পরিপূর্ণ দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় থেকে টানা দুই মেয়াদে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু সেই অংশগ্রহণের অংশটাকেও আজ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। গতকাল রাত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশের বিভিন্ন আসনে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে বা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে নারী ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অথবা তাদের সামনে সিল মেরে দেওয়া হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্যদের সহযোগিতায় এগুলো করা হচ্ছে। সারাদেশের সার্বিক নির্বাচনের চিত্রটা এরকমই।
সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার সময়ও আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশায়ও পদাঘাত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে হতাশ, বিষণ্ন ও বিস্মিত করা হয়েছে। নির্বাচনের নামে এই অর্থহীন তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি না। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বা অন্য কোনো কায়দায় একটা গেজেট জারি করে নিলেই হতো যে, নৌকা ২৯৯ আসন বা দুইশ সাড়ে নিরানব্বই আসন পেয়ে গেছে। এমনটা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকতো না। কিছু প্রক্রিয়া দেখিয়ে নির্বাচন হালাল করার ব্যবস্থা আজ পরিপূর্ণ করা হলো।
তিনি আরো বলেন, মানুষের বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনের সঙ্গে যারা তামাশা করলেন, বিদ্রূপ করলেন, রক্তাক্ত করলেন, আহত করলেন তারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। জনগণের একদিনের রাজা হওয়ার সুযোগটা ধুলিস্মাৎ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত (দুপুর ২টা পর্যন্ত) যা জানতে পেরেছি তাতে ২২১ আসনে অনিয়মের একই চিত্র। মাত্রার হেরফের থাকতে পারে। তবে সারাদেশে সার্বিক চিত্র এমনই। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটতো প্রায় শেষ হয়েই গেছে। ভোটে না থাকার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই। থাকতেই হবে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আপনারা কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত কি করবো বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।