সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করতে তাদেরকে উৎকোচ হিসেবে ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দেশব্যাপী নির্বাচনী সহিংসতা চলছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী সহিংসতা ও ব্যাপক নৈরাজ্য ঢাকতে সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা) এখন বকধার্মিক সেজেছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী এ কথা বলেন।নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় আছে বলে সিইসির দাবি প্রসঙ্গে বিএনপির এ অন্যতম মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের কথা বলে তিনি হামলাকারী সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করে ফেলেছেন। শুধু বিরোধী দলই নয়, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, নির্বাচন বিশ্লেষকরা দৃশ্যমান সহিংসতা নিয়ে যখন সমালোচনামুখর, দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা যখন উদ্বিগ্ন, তখন তিনি হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে মূলত আওয়ামী চেহারাটাই জনগণের সামনে উন্মোচিত করেছেন। দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনের ভেতর থেকেও যখন সত্য কথাটি বেরিয়ে আসছে, সেটিকেও তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা- গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, এতো কিছুর পরেও বিএনপি নেতাকর্মীরা অটুট মনোবলে নির্বাচনী যুদ্ধে নিয়োজিত। সারাদেশে ধানের শীষের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মদতে ও ছত্রছায়ায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের আহত করছে, বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে পুলিশি তাণ্ডব ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা করে নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। নির্বাচনী সমাবেশ থেকে ফেরার পথে সাদা পোশাকধারীরা ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করে রাখছে। প্রচারের মাইক ভেঙে ফেলছে। লম্বা বাঁশের উপরে কাঁচি লাগিয়ে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো ভাঙচুর করছে। এমনকি পোস্টার কিংবা প্রচারপত্র যে প্রেস থেকে ছাপানো হচ্ছে সেই প্রেসে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করছে।

তিনি বলেন, দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা অতীত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ঠিক সেই দিনই মুন্সীগঞ্জে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তিন জন। সেদিনই বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী আক্রান্ত হয়েছেন। হামলার শিকার হয়েছে শত শত বিএনপি নেতাকর্মী।সেদিনই গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকশ’ বিএনপি নেতাকর্মীকে।সংবাদ সম্মেলনে তিনি কয়েকজন সচিব ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নামোল্লেখ করে বলেন, বুঝতে পারছেন এই ব্যক্তিবর্গ কারা? যাদেরকে উৎকোচ দিলে পরে নির্বাচনে কাজ করানো যাবে ঠিক তাদেরকে এই ফ্ল্যাটের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা নির্বাচন জালিয়াতি করার জন্য উৎকোচ দেওয়া হয়েছে।রিজভী বলেন, একটা পাতানো নির্বাচন করার জন্য সরকারের কত আয়োজন। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা (সরকার) আয়ত্ত করে লুটপাটের মাধ্যমে কিনে নিতে চাচ্ছেন যাদেরকে দিয়ে ভোট ডাকাতি করবে, ভোট জালিয়াতি করবেন তাদেরকে।অত্যন্ত বেআইনিভাবে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে খুব তাড়াহুড়া করে ঢাকার ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরস্থ বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গায় নির্মাণাধীন আবাসিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিছু সচিব, গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদেরকে। এসব ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শেষও হয়নি। সেংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি গাজীপুর-৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হকও বক্তব্য দেন।তিনি বলেন, এলাকায় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা দা-ছুরি-লাঠি নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করছে, প্রচারণা করতে দিচ্ছি না। এভাবে যদি চলতে থাকে আমরা কী করব? কীভাবে প্রচারণা চালাব আপনারাই বলুন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।

অবিলম্বে মিলনের মুক্তির দাবিও জানান তিনি। একই সঙ্গে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির বিরুদ্ধে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে তাদের প্রত্যাহার দাবি করেন শম্পা।সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রুমানা মাহমুদের নির্বাচনী প্রচারে পুলিশের গুলিতে দুই চোখ হারানো মেরিনা বেগম ও সিরাজগঞ্জের ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ জয়ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

রিজভী বলেন,এই বেদনা বিধুর দৃশ্য প্রতিদিনই হচ্ছে। আমরা যা বলছি তা যে এক বিন্দুও মিথ্যে নয় এটা তার প্রমাণ। সারা দেশ কারবালায় পরিণত করেছে সরকার।তিনি বলেন, সারা দেশে হাজারো বিএনপি নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বানোয়াট মামলার আসামি করা হয়েছে। এরপরও সরকারের সব নির্যাতন উপেক্ষা করে বর্তমান ভয়াবহ দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্তি পেতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। জনগণ ভোট দিতে না পারলে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিপদে পড়বে। তবে জনগণ ভোট দেবেই, ভোট দিতে জনগণ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, জনগণের বিজয় অর্জিত হবেই।ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, তাদের বাড়িঘরে হামলা, নির্বাচনী প্রচারে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার নানা চিত্র তুলে ধরেন রিজভী। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান তিনি।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জিয়াউর রহমান খান, সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।