হালকা কুয়াশা নিয়ে এবার শীতের আগমন ঘঠেছে। ইতোমধ্যে বাতাসে দেখা দিয়েছে হিমেল ছোঁয়া। মুলত হেমন্তকেই শীতের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। আর হেমন্তের রাতে দেখা মেলে কুয়াশা। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশিরবিন্দু মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে ভোরের নরম রোদে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত অনুভূত হচ্ছে গতমাস থেকে। মধ্যাঞ্চলেও শীতের মাত্রা নগন্য। তবে বেশকিছু দিন ধরে শীতের অনুভূতি পাচ্ছেন রাজধানীবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও-কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। একই সঙ্গে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কার্তিকের পর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ-মাঘ শীতকাল ধরা হলেও এবার আগ্রহায়ণের শুরুকে শীত শীত অনুভূত শুরু। এর মধ্যে অনেকেই আলমারি থেকে শীতবস্ত্র বের করে রোদে মেলে দিচ্ছেন। গায়েও চাপিয়েছেন কেউ কেউ। শীতকে বরণ করার এও এক প্রস্তুতি।
ষড়ঋতুর এই দেশে শীতের আগের ঋতুটি হেমন্ত। প্রকৃতিতে চলে বর্ষার বিদায় আর শীতের আগমনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে শীত আসে একটু একটু করে। শিশিরে ভিজে লাল টকটকে হয়ে ওঠে চিলেকোঠার টবের লাল গোলাপ। শীতের শুস্ক-রুক্ষ প্রকৃতির অপবাদ ঘোচাতে এ সময় গাঁদা, মল্লিকা, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস ফিরে পায় পূর্ণ জৌলুস; গাঢ় হয় কলাপাতার রঙ।
হঠাৎ কুয়াশার আগমন সম্পর্কে আবহাওয়া দপ্তর জনায়, বাতাসে ধূলিকণা জমে যাওয়ার কারণে কুয়াশার মতো অনুভূত হতে পারে। আবহাওয়াবিদ জানান, ধুলো-মেঘের কারণে সূর্যের আলো নিচে নামতে পারছে না। এশিয়ার দেশগুলোতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদনের কারণেই আকাশে ধুলোর আস্তরণ জমছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশেও এমন কুয়াশা পড়েছে। তিনি বলেন, `আবহাওয়া ক্রমেই বৈরী আচরণ করছে। আগে একটা বড় সময় বিরতি দিয়ে অতি শীত, অতি গরম বা অতি বৃষ্টির ঘটনা ঘটত। কিন্তু এখন উল্টো ঘটছে। ভবিষ্যতে আবহাওয়া আরও বৈরী হয়ে উঠতে পারে। বৃষ্টি কমলেই শীতের দাপট বাড়তে থাকবে।
একদিকে কুয়াশা ও শীতের কারণে মধুর বিপদে পড়েছেন কৃষক। শীত এবার দীর্ঘায়িত হলে শীতকালীন ফসল গম, ভুট্টা ও চায়ের উৎপাদন বাড়বে। শীতের স্বাভাবিক আচরণ ঠিক থাকলে যথাসময়ে আলু, গম, সরিষা ও ভুট্টা ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো চাষ করতে পারবেন কৃষকরা।
মাঠে এখন আলুর বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। তৈরি হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। শীত আগাম সবজির জন্য শুভ হলেও কুয়াশায় কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সিলেট অঞ্চলে শীতের সময়সীমা কমে যাচ্ছিল। ফলে চায়ের উৎপাদনও বছরের পর বছর কমে যাচ্ছে। শীত ক্রমেই পূর্বদিক থেকে উত্তরে প্রসারিত হওয়ার কারণে সিলেটের পর বাংলাদেশে চা উৎপাদনের নতুন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে উত্তরবঙ্গ। এবারের শীত চা চাষের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।