খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমান অধিকার নিশ্চিত এবং গ্রহণযোগ্য তফসিল হলেই কেবল নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৯ নভেম্বর) রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।তিনি এ সময় বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ছুটে আসা উপস্থিত নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে যে ধরনের বিচার হয়নি, খালেদা জিয়াকে তেমন বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। জেলখানায় আটকে ছোট্ট ঘরে তার বিচার করা হচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আরও বলেন, পুলিশ দিয়ে সরকার জনগণকে আটকে রাখতে চায়। কিন্তু খালেদা জিয়া কোনও হিংসা চায় না। তাই তার নির্দেশে আমি জাতীয় ঐক্য তৈরি করে সংলাপে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। তারা (ক্ষমতাসীন দল) কোনও আশ্বাস দেয়নি।ফখরুল উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন, মামলা- মোকদ্দমা দিয়ে আপনাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাই আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সমাবেশে কৃষক শ্রমিক লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি বিএনপির সভায় আসিনি। ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে এসেছি। তাই আমি যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বিভেদ ঘুঁচাবো।তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। তাই তাকে বন্দি করে রাখা যাবে না।এ সময় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি বলেন, নির্বাচন যাবো, এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকা ভেসে যাবে।ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেওয়া কথা রাখেননি। কথা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তাঁর কথা বরখেলাপ করেছেন।সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকার্যকর। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি।জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলিখিত বাকশাল কায়েম করতে সরকার দেশের সব সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয়করণ করেছে।ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জনসভায় বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে।মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছে। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই তফসিল পেছানোর। আমাদের দাবি না মানলে কোনো নির্বাচন নয়।রাজশাহীর জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ঢাকায় আসেন, দেখি ওরা আমাদের কথা শুনে কিনা। আমরা আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু এরই মাঝে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।মন্টু সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার বিচার চাই, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাইরে থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হবে।জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এদেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।

জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।জনসভায় আরো বক্তব্য দিয়েছেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টি এম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ।এর আগে আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজকের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।