রাজধানী ঢাকার দক্ষিনে বিক্রমপুরের বহু নামিদামী জেলা মুন্সীগঞ্জ, এখানে ৬টি উপজেলা রয়েছে। কবি লেখক সাহিত্ব্যিক গবেষক সহ বহু এমপি মন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল রয়েছে এ জেলায়। তবে সরকারী দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছে বেশি। সাধারণ জরিপ বলছে,লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী এ দুই’উপজেলা আ.লীগের ঘাটি বহুপূবের্ থেকেই গড়ে উঠা।এদিকে আ.লীগের মনোনয়ন,চেয়ে দুইজনেই।
দেখাযায় সরকারের উন্নয়ন আর সাফল্য নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চাইছেন।একজন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের নারী সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। পাশাপাশি আরেক জন প্রার্থী অ্যাটর্নিজেনারেল মাহাবুবে আলম। অ্যাটর্নিজেনারেল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তার নির্বাচনী এলাকায় আসছেন। নৌকার জন্য তিনি ভোটার দের কাছে ,ভোট চাচ্ছেন। আর একজন অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ও ঠিক একই তার এলাকায়।এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা।শুরু হয়েছে বিভাজন। তবে, শেষ মুহুর্তে মনোনয়ন প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি।মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ১৩টি ও লৌহজং উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-১৭২ (মুন্সীগঞ্জ-২)। এই আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫ হাজার ৮২২জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০ জন।২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ-২ আসনটি প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় ,সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী আসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে চলে যায়। এদিকে, আওয়ামী লীগের তুলনায় এখানে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা পিছিয়ে আছে।
আবার জেলা উপজেরার দল গুলোতে রয়েছে ভয়াবহ দ্বন্দ। আর এই দ্বন্দের কারণে দলের ত্যাগি নেতাকর্মীদের পদবঞ্চিত করে দল থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে বর্তমানে দলীয় কর্মকাণ্ড না থাকলেও এই আসনে বিএনপি দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার থাকায় মাঠ তাদের অনুকুলেই রয়েছে বলে নেতাকর্মীরা বল্লেন। এ দিকে গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাকে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমিলি ১৯৯৬ সালে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিএনপির এই দুর্গে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে হাল ছাড়েননি। এরপর ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দিতা মূলক নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এসপি মাহবুবউদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি টঙ্গিবাড়ী ওলৌহজং উপজেলায় জনপ্রিয় তায় পরিণত হয়েছেন।এরআগে বিএনপির টিকিটে ১৯৯৬ সালে এই আসনে প্রথম সংসদ সদস্য হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সিনহা।এদিকে, এবছরের জানুয়ারীর শুরু থেকে আজ নভেম্বর পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায়, মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ শুরু করা এবং তার সমর্থকরা বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, মাহবুবে আলম আসার পর থেকেই সুসংগঠিত আওয়ামী লীগে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এদিকে, বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন লাভে এগিয়ে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান সিনহা। পাশাপাশি দলীয় নমিনেশনের জন্য আরও একাধিক বিক্ষুব্ধ প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগ এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ৭ জন।মূল আলোচনায় রয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। এছাড়াও প্রার্থী হিসেবে এলাকায় কাজ করছেন, অ্যাটর্নিজেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ, লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার।সর্বশেষ গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টঙ্গিবাড়ীর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে অ্যাটর্নিজেনারেল মাহবুবে আলমের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ নেতা জগলুল হালদার ভুতু বলেন,মুন্সীগঞ্জের ৩ টি আসনের দুটিতে হিন্দু সংসদ সদস্য ও অপরটিতে একজন মহিলা সদস্য। আমরা মরে গেলে তারা আমাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবেন না।
আমরা মুন্সীগঞ্জবাসী এতোটাই দুর্ভাগা আর এখানে মনোনয়ন যদি পায় একজন মহিলা, অপর দুইটি আসনে রয়েছেন মৃণাল কান্তি দাস ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নামে দুইজন হিন্দুকে। আমরা মরে গেলে যারা আমাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবে না। জানাজায় যারা অংশ নিতে । তাই আগামী নির্বাচনে তাদের নমিনেশন দেয়ার না দাবি জানান ওইনেতা। তার এই বিতর্কিত বক্তব্যে ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের কাছে আওয়ামী লীগ নেতা ভুতুর হালদারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন, জেলা পরিষদের সদস্য আকলিমা বেগম স্বাক্ষরিত নারী জনপ্রতিনিধিরা স্মারকলিপি পেশ করেন।এছাড়া, ভুতুর বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, প্রতিকী অনশন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি চলছিল মুন্সীগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকায়। এরআগে লৌহজংয়ে জন্মাষ্টমীর আলোচনা সভায় অ্যাটর্নিজেনারেল মাহবুবে আলম হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে সাক্ষাতপ্রদর্শনের সময়ে হট্টগল অভিযোগ তুলে গত ৩রা সেপ্টেম্বর সকালে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদারের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করেন। এছাড়া গত শুক্রবার (২৬শে অক্টোবর) টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সদরে গণসংযোগ এবং পরদিন (২৭ অক্টোবর) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের নির্বাচনী জনসভা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ওই কর্মসূচি বাতিল করা হয়। বা ওই কর্মসূচি দুইটি বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে বলে তার দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি।এদিকে, লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার প্রার্থীর হওয়ার ঘোষণা দিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসেন। দলের বাইরেও এলাকায় রয়েছে তার ইমেজ। দল ও কর্মীদের দিচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা। আর এইসব কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ তরুণদের কাছে প্রিয়ভাজন আব্দুর রশিদ শিকদার। শিকদার সমর্থকদের দাবি, বর্তমানে দলকে সুসংগঠিত করে রাখার পেছনে তার ভূমিকাও রয়েছে যথেষ্ট। প্রায় প্রতিদিনই দলীয়সহ নানা কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিচ্ছেন। সাবেক হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেছেন, বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকার লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ, জাতীয়করণ, কৃষকের ঋণের সুবিধা, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে এবং তার নির্বাচনী এলকায় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। তার আসনে কোন গ্রুপিং নেই, নেই কোন নোংরামি। প্রশাসন, এমপি, উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মিলেমিশে একটি টিমওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত সাধারণভাবে মেলামেশা করছেন। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচদিন এলাকায় থাকছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে তাকে প্রার্থী দিলে নারী ভোটারসহ সবশ্রেণী পেশার মানুষের ভোট পেয়ে তিনি নৌকার জয় উপহার দিতে পারবেন এবং তার প্রতি এলাকার ভোটারদের আস্থাও আছে বলে এই নেত্রী জানান।অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম জানান, গত নয় বছরের অধিক সময় ধরে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। এই সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেলহত্যার বিচার, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, ক্যান্টমেন্টের খালেদা জিয়ার বাড়ি দখল, মওদুদ আহমেদ-এর বাড়ি দখলসহ অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা করেছেন।
এইসব বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে তিনি এই আসনে প্রার্থী হতে চান এবং দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। দল নমিনেশন দিলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করে নৌকার বিজয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল এবং প্রার্থীও থাকবে একাধিক-এটাই স্বাভাবিক। কিছু কাঁদাছোড়াছুড়িও হবে। তারই অংশ হিসেবে একটি চক্র তার বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। নমিনেশন নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর আর এসব থাকবে না। সবাই মিলেমিশেই নির্বাচনটি করা হবে।তার সঙ্গে গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাওয়া চৌরাস্থা মসজিদে জুমার নামাজের পড় যোগাযোগ করা হলে তিনি আরও জানান, নমিনেশনের ব্যাপারে পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জানা বাকি নেই কে পাবে ।তবে এখনও দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। আমিতো আশাবাদী ১০ বছরে যা করেছি, তার মূল্যায়ন আমার আসবে।লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি আলহাজ আব্দুর রশিদ শিকদার বলেছেন, নির্বাচন আসলে মাঠে একাধিক প্রার্থী থাকবে এবং আমাদের এখানেও আছে। এই বিষয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব উপজেলা এবং সব আসনেরই খবরাখবর আছে। তিনি যাকে দিয়ে নির্বাচন করাতে চান আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ তার পক্ষেই কাজ করবো এবং নৌকাকে জয়ী করে তাকে উপহার দেবো। বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আলী আজগর মল্লিক রিপন। এদের মধ্যে মিজানুর রহমান সিনহার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন মল্লিক প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।রিপন মল্লিক টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এরপর মিজানুর রহমান সিনহার হস্তক্ষেপে রিপন মল্লিক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন গত সম্মেলনে। শেষে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ ছেড়ে জাপান প্রবাসী খান মনিরুল মনি পল্টনকে পদটি দেয়া হয়। এরপর মিজানুর রহমান সিনহা গত বছরের এপ্রিল মাসে জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে আলী আজগর মল্লিক রিপনকে সরিয়ে দেন। নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করে আনেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন মল্লিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল হাইয়ের শিবিরে চলে যায় এবং প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়।এরপর গত ১৮ জুলাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ, সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান সিনহার হস্তক্ষেপে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আড়িয়ল-বালিগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন দোলনকে সভাপতি এবং ধীপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিটি কলেজের সাবেক এজিএস আখতার হোসেন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন।
এ ঘটনায় বাদ পড়া অংশটি নানা কর্মসূচি পালনসহ গত ৩১ শে জুলাই পুরনো কমিটি কার্যক্রম বলবৎ এবং নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন বাদপড়া বা বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খান মনিরুল হক মনি পল্টন। এই মামলা আমলে নিয়ে আদালত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। পরে খান মনিরুল মনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে, টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলা যুবদলের কমিটি অনুমোদন না দেয়া এবং মিজানুর রহমান সিনহার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মোল্লাকে গত ২৩ শে অক্টোবর তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। এরআগে গত ১৩ই জুন জেলা যুবদলের সাত সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।দল থেকে একের পর এক নেতাদের সরিয়ে দেয়া নিয়ে মিজানুর রহমান সিনহার ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা বলেছেন, দল নির্বাচনে আসলে তিনি নির্বাচনটা ভালোভাবেই করবেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে জয়লাভ করতে দেয়া হয়নি।
এরআগে তিনি যখন সরকারে ছিলেন, তখন এলাকার উন্নয়ন সাধ্যমতো করেছেন। তার প্রতি জনগণের চাহিদা থাকায় এবারও তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। নির্বাচিত হলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার তেঘড়িয়া রাস্তাসহ অসমাপ্ত কাজগুলো করবেন বলে তিনি জানান।তৃণমূল থেকে জাতীয় রাজনীতিতে আসা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোন নির্বাচন নয় এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে তারা কোন নির্বাচনে যাবেন না-এটা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বেগম জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের মাঝে ফিরে এলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এরআগেও দুইবার তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন, দল তাকে দেয়নি। জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আজগর মল্লিক রিপন বলেছেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তাকে না দেয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন।মিজানুর রহমান সিনহা একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের দিয়ে রাজনীতি হয়না। রাাজনীতি বুঝেন না বলেই দলের ত্যাগি নেতাদের দল থেকে সরিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
এদিকে, রিপন মল্লিকের সমর্থকরা জানিয়েছেন, মিজানুর রহমান সিনহাকে হারাতে যা করনীয় তারা তা করবেন। এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির সভাপতি মো. কুতুবউদ্দিন আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় নেতা নোমান মিয়া ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল হোসেনও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।