বিএনপির গঠনতন্ত্রে আনা সংশোধনী নিয়ে হাই কোর্টের এক আদেশের ফলে দুর্নীতিতে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখার পথ কার্যত আটকে গেছে।নয় মাস আগে আনা ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাই কোর্ট।আর ওই আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।বএনপির গণতন্ত্রের সংশোধিত ৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ অন্তর্র্বতীকালীন এই আদেশ দেয়।
আদালতের এই আদেশের ফলে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ আটকে গেল। একইসঙ্গে আবেদনটি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।এছাড়া, ‘দণ্ডিত ব্যক্তিরা পদে থাকতে পারবেন না’- বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে এই বিধান বাদ দেওয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এটি সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী।পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী বলেন, মোজাম্মেল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নয় মাস আগে নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন দিয়ে বলেছেন বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে এবং এই গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হলে বিএনপিতে দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতা হওয়ার সুযোগ পাবেন।
অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বলেন, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের বিধান সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যুন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে।তিনি আরও বলেন, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসিতে একটি আবেদন করেছিলেন মোজাম্মেল হোসেন। কিন্তু ইসি সেই আবেদন নিষ্পত্তি না করায় তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সেই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।প্রসঙ্গত, বিএনপি বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে। ওই ধারায় উল্লেখ ছিল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দণ্ডিত, দেউলিয়া, উন্মাদ বলে প্রমাণিত, সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে কিংবা দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।গঠনতন্ত্র থেকে এই কথাগুলো উঠিয়ে দিয়ে প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ৩০ বছরের কম বয়স্ক কোনও ব্যক্তি দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না’ এই অংশটুকু যোগ করা হয়। পরে সংশোধিত এই গঠনতন্ত্র ইসিতে পাঠায় বিএনপি। কিন্তু ওই সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে মোজাম্মেল হোসেন নামে কাফরুলের এক বিএনপি কর্মী নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানান। কিন্তু তার আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায় তিনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।