খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা বলেছি আমাদের সাত দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সবার আগে শর্ত হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনও নির্বাচনই অর্থবহ হবে না।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা মানববন্ধন করে বিএনপি।মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনও সংলাপ বা নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না। তিনি বলেন, সেজন্যই আমরা বলছি, গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসুন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে সৃষ্টি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন, কিন্তু সেই নির্বাচনে আপনারা হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে যাচ্ছেন আর আমাদের নেত্রী কারাগারে এবং আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের কর্মীরা কোথাও দাঁড়াতে পারেন না। এই অবস্থায় কখনও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বন্ধুরা আমরা মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। আসুন আমরা এই সংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করি। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করি। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকেব- আপনারা এই মানববন্ধনের জন্য এক ঘণ্টার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করবো সবসময় গণতান্ত্রিক কার্যকক্রম করার অধিকার যেন আমরা পায়।বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এমনকি তিনি জামিন পেলেও তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আজকে এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, এক দিকে সরকার সংলাপের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো হয়েছে। এই দুইটা সাংঘর্ষিক। এতে কোনও গণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিফলন ঘটে না এবং সংলাপের যে আন্তরিকতা তা প্রমাণ করে না। দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে বিচারব্যবস্থা সরকারের আয়ত্তে চলে গেছে।গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে এই সময়ে শুধু একটিমাত্র কারণে কারাবরণ করতে হচ্ছে, তা হলো মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন মির্জা ফখরুল।
সরকারের সঙ্গে সাত দফা দাবি নিয়ে সংলাপ, দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন, নির্বাচনের প্রস্তুতি সব একসঙ্গে চলবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।সংলাপে সাত দফার আলোকেই আলোচনা হবে মন্তব্য করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, সংলাপ-আন্দোলন-নির্বাচন একসঙ্গে চলবে। যত দিন পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এত দিন যাবৎ যে কৌশল নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি, সেটি ফলপ্রসূ হয়েছে। সরকার সংলাপ করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীরা সংলাপে নাকচ থাকলেও এখন তারা দেশের মানুষের মনের কথা উপলব্ধি করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা বাড়ানো ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজার প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে দলটির পূর্বঘোষিত মানববন্ধন শুরু হয়।বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন শুরু হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।