আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। বুধবার সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সূচনা বক্তব্যে একথা জানান ইসি সচিব।সূচনা বক্তব্যে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। নির্বাচনের প্রস্তুতির ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মালামাল জেলায়- জেলায় পৌঁছানো ও ব্যালট পেপার ছাপানো ছাড়া প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনাও আমাদের আছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব আরো বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচনটা করা হয়। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তফসিল ঘোষণার পর সব নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে বাধ্য। সেজন্য তার আগেই আপনাদের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক সভা করা যাতে আগে থেকেই আপনারা প্রস্তুতি নিতে পারেন।সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে-ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার; পার্বত্য দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা- নেওয়ার পদক্ষেপ; নির্বাচনী প্রচার; পর্যবেক্ষক নিয়োগ; পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে সহায়তা; নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিকল্পনা; ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ; নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী হাকিম নিয়োগ; বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা; আবহাওয়ার পূর্বাভাস; আগাম প্রচারণা সামগ্রী অপসারণ ও বিবিধ।এছাড়া ভোটকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার, পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেয়া ও মালামাল পরিবহন, নির্বাচনি প্রচার পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা, ঋণখেলাপির তথ্য, আগাম প্রচার সামগ্রী অপসারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এজেন্ডায় আছে।সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে ৩ নভেম্বর বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে যে তফসিল অনুমোদন পাবে, তা বিটিভি ও বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।তবে কবে সেই ঘোষণা আসবে তা এখনও প্রকাশ করেননি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, বুধবার ইসিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।পরদিন চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করবেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।৩ নভেম্বর বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশনের ৩৮তম সভা বসবে। এই সভায় একাদশ সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে।৩১ অক্টোবর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর পর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই যে তফসিল ঘোষণা হতে পারে,সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, কমিশন সভায় তফসিল অনুমোদন হবে। এরপর বিটিভি ও বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে তফসিল ঘোষণার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিলও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছিল। ইসি কার্যালয়ে সিইসির সেই ভাষণ রেকর্ড করা হবে। তারপর নির্ধারিত সময়ে তা প্রচার করা হবে। ধারণ করা ভাষণ সাধারণত সন্ধ্যায় প্রচার করা হয়।দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিটিভি মহাপরিচালক ও বেতার মহাপরিচালক ইসি সচিবের দপ্তরে এসেছিলেন। তফসিল ঘোষণার দিন ২৫ নভেম্বর সিইসির ভাষণ ধারণের জন্য দুপুরেই প্রস্তুতি শুরু হয় কমিশন কার্যালয়ে। বিটিভির তৎকালীন মহাপরিচালক নিজে উপস্থিত থেকে সিইসির কক্ষ সাজানোর বিষয়টি তদারক করেন। পরে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের প্রায় আধা ঘণ্টার সেই ভাষণ ধারণ করা হয়।সেদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রেকর্ডিং শেষে কমিশনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সিইসি বলেছিলেন, তার ভাষণে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচারিত সিইসির সেই ভাষণে দশম সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়।ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচারের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় রাখা হয়। সেই হিসাব ধরে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েই সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।