ভবিষ্যতে শান্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক এক সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি এসিড টেস্ট।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ভব্ষ্যিতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।ক্রানস মনটানা ফোরামের হোমল্যান্ড অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামের ২০তম এই সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষাপট এবং সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই অভিযান চালানো হয়েছে সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে।বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু এরপর প্রায় এক বছর হতে চললেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি।তিনি বলেন, বিশ্বের সমস্যার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক সমাধান।… রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন।১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনিভাভিত্তিক ক্রানস মনটানা ফোরাম জাতিসংঘ, ন্যাটোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে।বিশ্ব নিরাপত্তায় প্রথাগত ধারণা পাল্টে গেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধ না থাকাকেই আমরা শান্তি হিসেবে ধরে নিচ্ছি। প্রথাগত নিরাপত্তার ধারণা পাল্টে গেছে। বিভিন্ন জাতির সম্পর্কের মধ্যে এই ধারণার পরিবর্তন স্পষ্ট। অনেক ‘নন-স্টেট ফ্যাক্টর‘এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছে।

সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার বহুজাতিক অপরাধ মানবতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। স্থানীয় অথবা আঞ্চলিক সংঘর্ষ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক দেশই এর বিরোধিতা না করে এর পক্ষে কাজ করছে।সাইবার আক্রমণের মত নতুন নিরাপত্তার হুমকি মোকাবেলায় সব দেশের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ।এছাড়া জীববৈচিত্র রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক সংঘর্ষ মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।দ্যা হার্ডেনিং অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস: এ রিস্ক টু পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ শীর্ষক এই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্মেন সারকিজিয়ান, লেসেথোর প্রধানমন্ত্রী টমাস থাবেন, ক্রানস মনটানা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জ্যাঁ-পল কার্তেরঁ বক্তৃতা দেন। জাতিসংঘের বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন এবং ক্রানস মনটানা ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার জেনিভা পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। সফর শেষে শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।