চীনের মুল ভূখণ্ডের ঝুহাই শহরের সাথে ৫৫ কিলোমিটার বা ৩৪ মাইল দীর্ঘ এ সেতু সংযুক্ত করবে হংকং ও ম্যাকাওকে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এর ফলে আগে যেখানে এ পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হতো, সেক্ষেত্রে এখন লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) ঝুহাইতে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে প্রকৌশলী ও স্থাপত্যের দিক থেকে দুর্দান্ত হলে সেতুটি নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বিস্তর এবং একে অনেকেই ইতোমধ্যে ‌‘শ্বেতহস্তী’ আখ্যায়িত করছে। কারণ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় বিশ বিলিয়ন ডলার বা দু’হাজার কোটি ডলার। আর নির্মাণকালীণ নিরাপত্তা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে চীনকে কারণ নির্মাণ কাজ চলার সময় নিহত হয়েছে ১৮জন শ্রমিক।

সেতুটির বিশেষত্ব কী?

এ সেতুটি দক্ষিণ চীনের গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় শহর হংকং, ম্যাকাও এবং ঝুহাইয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করবে। শক্তিশালী মাত্রার টাইফুন কিংবা ভূমিকম্প প্রতিরোধী এ সেতুটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে চার লাখ টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে যা দিয়ে ৬০টি আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা সম্ভব।

সেতুটির প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পার্ল নদীর ওপর দিয়ে গেছে আর জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে ছয় দশমিক সাত কিলোমিটার রাখা হয়েছে সাগরের নীচে টানেলে এবং এর দু’অংশের মধ্যে সংযোগস্থলে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ। আর বাকী অংশ সংযোগ সড়ক, ভায়াডাক্ট আর ভূমিতে টানেল যা ঝুহাই ও হংকংকে মূল সেতুর সাথে যুক্ত করেছে।

কিন্তু কেন এটি নির্মাণ করতে হলো?

এটি আসলে হংকং, ম্যাকাও এবং আরও নয়টি শহরকে যুক্ত করে একটি বৃহত্তর সাগর এলাকা তৈরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সেতু নির্মাণ করেছে চীন। এর আগে ঝুহাই থেকে হংকং যেতে সময় লাগতো চার ঘণ্টার মতো। সেখানে নতুন এ সেতুর কারণে সেখানে লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা। এ এলাকায় এখন প্রায় ছয় কোটি আশি লাখ মানুষ বসবাস করে।

কেউ চাইলেই সেতুটি অতিক্রম করতে পারবে ?

না পারবে না। যারা সেতু পাড়ি দিতে চান তাদের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে আর সব যানবাহনকেই টোল দিতে হবে। এ সেতুতে কোন গণ পরিবহণ থাকবে না তবে যাত্রী ও পর্যটকদের জন্য শাটল বাস থাকবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন দিনে প্রায় নয় হাজার দু’শো যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করবে।

এর খরচ উঠবে তো?

সংযোগ সড়ক ও কৃত্রিম দ্বীপসহ সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে দু’হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধুমাত্র সেতুর মূল অংশ নির্মাণেই খরচ হয়েছে প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির অর্থনীতিতে এটি প্রায় ১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে যদিও এ ব্যাখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বিবিসি নিউজ চাইনিজ এর তানিয়া চান বলেন, যথেষ্ট পরিমাণ গাড়ি চলতে না দিলে এটি কিভাবে টেকসই হবে আমি নিশ্চিত নই। আমি নিশ্চিত যে নির্মাণ ব্যয় আমরা ফেরত আনতে পারব না।

একটি হিসেব অনুযায়ী টোল থেকে বছরে আসবে মাত্র আট কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর এ সব কারণেই সমালোচকরা এর নাম দিয়েছেন ‘শ্বেতহস্তী’। বিবিসি বাংলা।