‘বঙ্কিম বাস্তবতা’
মানবতা আজ তুমি প্রশ্নের মুখোমুখী।
তোমার জীর্ণ চরিত্রের,ছদ্ম আভিজাত্যে আজ,
বিদ্রুপাত্মক প্রশ্ন ছুড়ি আমি- কী তুমি?
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ছো, কে আমি ?
শোন তবে আমার অন্তর্নীল কাহীনী-
আমি সারা পৃথিবীর অমানবিকতায় ঝলসে যাওয়া এক বিধ্বস্ত ইতিহাস,
আমি তোমার দেশের অগনিত বৃদ্ধ অক্ষম বাবার অসহায় দীর্ঘশ্বাস।
আমি ৭১ এ রক্তস্রোতে ভেসে উঠা,
লাশ স্তুপে জমা পড়া এক আহত শিশু।
সেদিন অনেক শিশু, আমার অবুঝ চোখের সামনে,
কপালে লাল-সবুজের পতাকা এঁকে হেসেছিল স্বাধীনতা বলে,
আর আমি-
মিলিটারির জিপে ছিড়ে থাকা মায়ের শাড়ির টুকরো কুড়িয়ে কেঁদেছিলাম সাধীনতা বলে।
আমি তোমার ঘরের নির্যাতিতা কোন এক গৃহবধুর নিরব আর্তনাদ,
আমি তপ্ত দুপুড়ে তরুহীন, মরুমাঠের এক ক্ষুধার্ত কৃষক।
আমি ফুটপথে বসে থাকা কোন কঙ্কাল দেহের পলকহীন চাহনী,
আর বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রাখা কোন ধনকুবের বাবার অতীত কাহিনী।
আমি কোন কিশোরী মেয়ের শরীরে জড়ানো বিধবার শাড়ি,
আমি স্বাধীন দেশে, আমার স্বদেশী ভাইয়ের হাতে এক লাঞ্চিত নারী।
আমি কোন ব্যাভিচারিনী মায়ের সদ্য জন্মজাত এক পাপিষ্ট মাংসপিন্ড,
আর তাঁর উন্মাদ পিতার অত্যাচারে আজ সে অগ্নিদগ্ধ।
আমি আমার ক্ষুধার্ত গর্ভবতী মায়ের পেটে, অনাহারী,অস্পষ্ট শিশু,
আমি কন্যাদায়গ্রস্থা কোন ভূমিহীন পিতার অদৃশ্য ক্ষত,
আমি ফুটপথে শুয়ে থাকা কোন অবুঝ বালকের,বস্ত্রহীন শরীরে আঘাতের চিহ্ন।
আর অন্ধকারে ভেসে আসা,স্বজনহারা কোন দুর্ভাগা কিশোরীর মূল্যহীন আত্মচিৎকার।
আমি এক বৃদ্ধ পিতার বেকার ছেলের অক্ষমতার গ্লানি,
আর পিতৃহীনা কোন অবুঝ বালিকার চোখে পিতার জন্য অপেক্ষার চিঠি
আমি তোমার হাতে লাঞ্চিত এক কিশোরীর কন্ঠে মৃত্যুর জন্য আকুতি,
আমি বাঁচার জন্য লড়া এক গার্মেন্টস্ কর্মী ।
আমি মানবতার স্বপ্ন খুনের রক্তে ভাসা এক লৌহমানবী ।
অতপরঃ-
আজ তুমি প্রশ্নের মুখোমুখী, কী তুমি………………………?
লেখিকাঃ আজিনূর আক্তার
শিক্ষার্থী,ইতিহাস বিভাগ ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়