২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির কোনো নেতা জড়িত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে, উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু এবং লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপি নেতাদের জড়িয়েছে। এ মামলায় বিএনপির কোনো নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। সরকার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করে, প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের না করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে পুরো বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। উদ্দেশ্য একটাই এদেশ থেকে বাংলাদেশী জাতীয়বাদকে ধ্বংস করা।তিনি বলেন, বিএনপি সরকার ঘটনার পরপরই মামলা করেছে, তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এমনকি এফবিআইকে আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১/১১ সরকারের সময় যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল, যে তদন্ত করা হয়েছিল সেখানে কোথাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপির কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ৬১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের কেউ তারেক রহমানের নাম বলেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গোটা পরিস্থিতি বদলে গেলো। আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করে, কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। বিএনপি সরকারের সময় যিনি চাকরি হারিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিল। তাকে দেওয়া হলো তদন্ত কর্মকর্তা। মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। আদালতে সে নিজেই বলেছে আমার নকগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। অত্যাচার করে তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সেভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়িয়েছে।

মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপির কোন নেতাই ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। কারণ যে কোনো ঘটনার একটা মোটিভ থাকে। এ ঘটনায় বেনিফিশিয়ারি (লাভবান) কে হয়েছে? আওয়ামী লীগই হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটিকে ইস্যু করে বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। সঠিক তদন্ত করা হলে, প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসতো।বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিলেন না দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগই ওই ঘটনার ‘সুবিধাভোগী’।

তিনি বলেন, দেখেন এই মামলার রায় নিয়ে বহু ঘটনা ঘটেছে, বহু কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃত সত্যটা কেউ উদঘাটন করতে চাইছে না। আমি হলফ করে বলতে পারি, জনাব তারেক রহমান, আমাদের আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপির কোনো লোক জড়িত ছিল না।২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

ওই ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১০ অক্টোবর দিন রেখেছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ মোট ৪৯ জন এ মামলার আসামি।আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে দলকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা হয়েছিল এবং তাতে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতাদের।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।মির্জা ফখরুল বলেন, যে কোনো হত্যাকাণ্ডের একটা মোটিভ থাকবে। এই মোটিভে বেনিফিশারি কে হয়েছে? আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটাকে ইস্যু করে বিএনপিকে ধ্বংস করছে, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে, বিএনপির বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে।২১ অগাস্ট মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মামলার সঠিক তদন্ত যদি করা হত, সঠিকভাবে যদি দোষী ব্যক্তিদের বের করা যেত তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসত।

এ মামলার তদন্তভার সিআইডির অতিরিক্ত উপ মহা পুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আব্দুল কাহার আকন্দের ওপর ন্যস্ত করার পর মামলাটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সূত্র ধরে ফখরুল বলেন, তিনিও বলেছেন, বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয়েছে লোয়ার জুডিশিয়ারি। কারণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে এটি রয়েছে।

তার ভাষায়, জনগণকে বাদ এখন সরকার নির্ভর করছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর।আজকের পত্রিকায় আছে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পেনশন বাড়িয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনার এখন আর জনগণের প্রয়োজন নেই। আমলা-পুলিশ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-বন্দুক পিস্তলধারী লোকজন, সরকারি লোকজন হলে তার চলে যায়। দেশ এখন গভীর সঙ্কটে পড়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন মুখ বুঝে পড়ে না থেকে প্রতিবাদ করতে হবে।প্রতিবাদের ভাষাটা নিয়ে রাজপথে আসতে হবে- এর কোনো বিকল্প নাই। কেউ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে না, কেউ এই সরকারকে সরিয়ে দেবে না, যতক্ষণ পর্য্ন্ত না জনগণ সরিয়ে দিচ্ছে।এজন্য জনগণকে সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, ব্যক্তি নয়, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তিকে সরাতে হবে। আন্দোলন বলুন, নির্বাচন বলুন, মানুষের অধিকার বলুন- সব কিছু জনগণের শক্তির মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করতে পারি। সংগঠনের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও নাজিম উদ্দিন আলমের পরিচালনায় এ আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, খোন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান বক্তব্য দেন।