সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আভাস মিললেও ধীরে চলা নীতি অবলম্বন করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর আগে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক (এসডি) মওকুফের জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বিইআরসি সম্পূরক শুল্ক ব্যয় মেটাতেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য দেয়।কিন্তু গত সপ্তাহে সম্পূরক শুল্ক মওকুফের ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আদেশ পাওয়ার পর এবং বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক কিছু ভেবে দেখছে বিইআরসি।
বিইআরসি সূত্র ইউএনবিকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জ্বালানি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখেছে।এদিকে বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, সম্পূরক শুল্ক মওকুফের পর গ্যাসের মূল্যের সাথে রেগুলেটরি কমিশন এখন সমন্বয়ের কাজ করছে। সোমবার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখন খুব কঠিন সময় অতিক্রম করছি। বিইআরসিকে তাদের সিদ্ধান্তের (গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি) জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সরকার নতুন করে অসন্তোষে পড়তে চায় না বলেই বিইআরসিকে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বলেছে।তাঁরা জানান গ্যাসের দাম বৃদ্ধি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, কারণ গ্যাসের মূল্যের সাথে আরো অনেক খাত জড়িয়ে থাকে। গ্যাসের মূল্যের ওপর যেকোনো সিদ্ধান্তই অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। আর আগামী নির্বাচনের আগে সেটা সরকার কখনোই চাইবে না।এর আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ছাড়া সব ধরনের গ্যাসের দামই বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। গত জুনে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিও হয়। শুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে আদেশ দেওয়ার কথা ছিল কমিশনের।রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, একটি সরবরাহ কোম্পানি ও একটি এলএনজি বাজারজাতকরণ কোম্পানিসহ আট প্রতিষ্ঠানের সবই আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাত ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান গ্যাসের দাম গড়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির কাছে আবেদন করেছিল।
শুনানির সময় গ্যাস খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তি দেখায়, উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত এলএনজি ব্যয়ের কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিতে হয় তাদের, কারণ এতে তাদের খরচ যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যাবে। আর উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন, শিল্প কারখানা ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর ওপর।বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্স ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।
গত ১৮ আগস্ট থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে পেট্রোবাংলা। কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বর্তমানে এলএনজি থেকে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। মাস দুয়েকের মধ্যে এটি প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর থেকে এলএনজি থেকে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।