আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলার তদন্ত বন্ধ, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এ ধরনের মামলা না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটির শুনানির জন্য অন্য বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন।আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পৃথক পৃথক আদেশ দেন হাইকোর্ট। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী তার আদেশে গায়েবি মামলা হিসেবে অভিযোগকারীসহ অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী তারিখ ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন।এরপর আদালতের কনিষ্ঠ বিচারপতি আশরাফুল কামাল তার আদেশে বলেন, রিটটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এ রিটটি আমি প্রত্যাখ্যান (খারিজ) করলাম।পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গত ৮ অক্টোবর রুল পাওয়ার আশায় আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ড. কামাল হোসেন ৮ অক্টোবর শুনানি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আজকে (৯ অক্টোবর) তার আর আসার দরকার হবে না। আজকে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করলেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে বললেন, এসব ফৌজদারি মামলা রিটের আওতায় আসবে না, এগুলো কোয়াশিং (বাতিল) এ যাবে। জবাবে আমি আদালতকে বললাম, সারা দেশের আট লাখ লোক এ মামলায় আসামি। তাই একটি রিট করে আমরা এ ধরনের ঘটনা (গায়েবি মামলা) ঘটেছে কিনা, তা জানতে চাই। পরে আদালত দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিলেন। এর ফলে মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এরপর তিনি মামলাটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এ কে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়।গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটের আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এছাড়া, আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এসব গায়েবি মামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন এ ধরনের মামলা দেওয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অগণিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গায়েবি বা আজগুবি মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছিল।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।