টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় ন্যাশনাল ফ্যান কারখানায় হিট চেম্বারে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় কারখানা মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ৭/৮জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত আরো এক শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা গেছে। তার নাম লাল চাঁন মিয়া। তার বাড়ি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গীর পাগাড়ের ঝিনু মার্কেট এলাকায়। এ নিয়ে টঙ্গীর ফ্যান কারখানায় নিহতের সংখ্যা দাড়ালো ৩-এ। এ ঘটনায় আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী বিসিক এলাকাস্থিত ন্যাশনাল ফ্যান কারখানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত হিট চেম্বারে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হয় এবং আগুন ধরে যায়। আগুন মুহুর্তেই দু’টি ইউনিটে ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনায় কারখানার অন্ততঃ ৩৫ জন শ্রমিক দগ্ধ ও আহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের মধ্যে আজিজুল হক ও সামসুল হক নামের দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহতদের মধ্যে দগ্ধ ৮ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়। সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে আরও একজন মারা যায়। হিট চেম্বারটি মূলতঃ তৈরী ফ্যানের যন্ত্রাংশে দেয়া কাঁচা রং পাকা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, বিস্ফোণে হতাহতের ঘটনায় নিহত আজিজুল হকের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে একটি দূর্ঘটনা জনিত মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ওই কারখানায় মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ৭/৮জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে ।
এদিকে টঙ্গীর ন্যাশনাল ফ্যান কারখানায় হিট চেম্বারে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মশিউর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত দলটি বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বিস্ফোরণস্থলসহ কারখানার বিভিন্নস্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন ও শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, হিট চেম্বার মূলতঃ ফ্যানের যন্ত্রাংশে দেয়া কাঁচা রং পাকা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ কারখানাটিতে অনেকগুলো হিট চেম্বার রয়েছে। এরমধ্যে একটিতে মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এ কারখানায় সাড়ে ৫শ’ শ্রমিক বিভিন্ন শিফটে নিয়মিত কাজ করছে।
তারা আরও জানান, বিস্ফোরণ ঘটনার পর আলামত সমূহ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য পুলিশ কারখানার প্রবেশ পথগুলো তালা দিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ মেইন গেইটে নোটিশ টাঙ্গিয়ে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছেন। শনিবার থেকে কারখানা চালানোর জন্য মালিক পক্ষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। শ্রমিক কর্মচারী ও মালিক পক্ষ নিহত ও আহতদের সমবেদনা জানিয়ে প্রধান ফটকে শোক ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে কারখানায় স্থাপন করা সিসি টিভি ফুটেজের ক্যামেরা ও আলামত সমূহ জব্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের আগে ও পরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর তথ্য সঠিক ভাবে বের করতে সিসি টিভি জব্ধ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে সঠিক তথ্য বের করা যাবে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটিতে খুবই নি¤œ মানের পরিবেশ বিরাজমান। এতে ফায়ার সার্ভিসেরও কোন অনুমোদন নেই। এ জাতীয় হিট চেম্বার দ্বিতীয় তলায় বসানোর কোন নিয়ম নেই এবং হিট চেম্বারের কোন অনুমোদনও নেই। এছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অদক্ষতারও প্রমান পাওয়া গেছে। তাদের টেকনিক্যাল বিষয়ে জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মশিউর রহমান বলেন, দেশে বয়লার পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকলেও লোকবল খুব কম। পুরো বাংলাদেশে মাত্র তিনজন বয়লার পরিদর্শক রয়েছেন। সারাদেশে প্রতিদিন একজন বয়লার পরির্দশক যদি পরিদর্শন করে তবে একশ’ কারখানা করা লাগে। তবে একটি কারখানার বয়লার পরিদর্শনে দুইদিন সময় লাগে। হিট চেম্বার পরিদর্শনে পরিদর্শকের কোন পদও নেই, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তাদেরও এটা আওতাভুক্ত নয়, এটা পরিদর্শনের জন্য কোন অথরিটিও নেই। হিট চেম্বার তৈরি এটা কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তৈরি। এটা কাঠামোগত বা কারখানার লে-আউটের মধ্যেও নেই।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে ।