সেতুমন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের হাফ ভাড়া নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মানছেন না পরিবহন মালিকরা। রাজধানীর সিটিং সার্ভিসে পুলিশের ভাড়া লাগে না। অথচ ছাত্র-ছাত্রীদের ফুল ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থেকে সাভারগামী লাব্বাইক পরিবহনের খামারবাড়ি পর্যন্ত চারটি চেকিং পয়েন্ট রয়েছে। এ পর্যন্ত আসতে প্রত্যেক যাত্রীকে ১০টাকা করে ৪০ টাকা দিতে হয়। স্টুডেন্টদের কাছ থেকেও একই ভাড়া আদায় করা হয়। তবে খামারবাড়ি থেকে গাবতলী পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা। এখানে স্টুডেন্টদের কাছ থেকে ৫ টাকা কম রাখা হয়। তবে যদি কোনো পুলিশের সদস্য থাকেন তাহলে তার কাছ থেকে কোনো ভাড়া আদায় করা হয়না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খামারবাড়ি চেকিং পয়েন্টে একই পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হয় ডেমরা থেকে মোহাম্মদপুর রুটের বাস স্বাধীন পরিবহনে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা রুটে রাইদা পরিবহন, কমলাপুর থেকে মিরপুর-১০ নম্বর রুটের আয়াত পরিবহনের কোনো চেকিং পয়েন্টে স্টুডেন্টদের হাফ ভাড়া আদায় করা হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাব্বাইক ও স্বাধীন পরিবহন নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত আসতে প্রায় ৫টি চেকিং পয়েন্টের ব্যবস্থা রেখেছে। আর সকল চেকিং পয়েন্ট পার হলেই ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধমন্দির এলাকা থেকে বাংলামটর কিংবা ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে সকল স্টুডেন্টদের ২০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। বাসাবো বৌদ্ধমন্দির এলাকা থেকে যাতায়াত করা মিরপুর বাংলা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর। তাদের প্রতিদিন ৩৫ টাকা বাস ভাড়া দিতে হয় কলেজে যেতে।
এসব শিক্ষার্থী বলেন, যখন বাসের মধ্যে চেকার বলেন, পুলিশ থাকলে হাত তোলেন। কিন্তু একবারের জন্য বলে না স্টুডেন্টদের হাত তুলতে। স্টুডেন্টের ভাড়া কম নেয়না, তবে পুলিশ যার মাসে আয় আছে তার জন্য কোনো টাকা দরকার হয় না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, কোথাও কোনো আইন নেই স্টুডেন্টদের জন্য হাফ ভাড়া আদায়ের। তবে সরকার থেকে ভুর্তকি দিলে আদায় করা যেতে পারে। সেতুমন্ত্রীর ঘোষণার কথা জানালে বাস মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, বিআরটিসি ছাড়া বেসরকারি কোনো পরিবহনে মন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হবে না। তা মন্ত্রী ঘোষণার পরের দিন মালিক সমিতি জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সিটিং সার্ভিস নামে কোনো সার্ভিস রাজধানীতে অনুমোদন নেই। বেআইনিভাবে এ ধরনের সার্ভিস চালানোর জন্য এবং যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়াসহ হয়রানি করার সাপোর্ট হিসেবে পুলিশের থেকে ভাড়া আদায় করছে না মালিক সমিতি। তিনি অতিদ্রুত সিটিং সার্ভিস বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেন।

বর্তমানে রাজধানীতে লোকাল গণপরিবহন নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকটি (বলাকা, ৬ নম্বর, তুরাগ, ৮ নম্বর) পরিবহন ছাড়া অন্য সকল গণপরিবহন সিটিং হয়ে গেছে। তবে বলাকা ও তুরাগ পরিবহন কিছু গাড়ি সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। এছাড়া মিরপুর ১৪ থেকে আশুলিয়া উদ্দেশ্য আলিফ ও মোহনা বাস গুলোতে ছাত্রদের জন্য নেই হাফ ভাড়া পাস নেই। কিন্তু পুলিশ এর জন্য রয়েছে পাস। বাস গুলো সিটিং এর নামে চল্লেউ অতিরিক্ত যাত্রি তোলা হয় বলছেন যাত্রিরা।

এদিকে শহরের প্রতিটি রুটে সিটিং সার্ভেসের নামে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে যাত্রী বহন চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী দেখা যায়, তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা। তবে সিটিং সার্ভিসে দেখা যায়, বাসাবো বৌদ্ধমন্দির এলাকা থেকে বাংলামটর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া রাখা হয় ২০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী ৫ কিলোমিটারের ভাড়া হওয়া উচিত ছিলো সর্বচ্চো ৮টা। এছাড়া বাংলামটর থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তার জন্য সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। সেখানে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে প্রতিটি যাত্রীকে। বাস যাএীরা ঢাকার প্রতিটি বাসের ভাড়ার ব্যাপারে সরকারের কাছে সুনিদিষ্ট একটি নীতিমালা প্রত্যাশা করে।

মোঃ সাইদুর রাহমান, মিরপুর প্রতিনিধি।