জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বাকশালের প্রেতাত্মা আখ্যা দিয়েছে বিএনপি।সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করার সব ষড়যন্ত্র সরকার সম্পন্ন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে সব পরিষ্কার বলেছেন- দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রর্দশনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করার সব ষড়যন্ত্র সম্পন্ন করেছে সরকার। বন্দুকের নলের মুখে দেশত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বইতে উল্লেখ করেছেন, কিভাবে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, কিভাবে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তিনি তার আত্মজীবনী বইয়ে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন-তিনি সরকারের চাপে ও হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বিচারপতি সিনহা তার ‘এ ব্রোকেন ড্রিম বইয়ে পরিষ্কার বলেছেন-বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রর্দশনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন এবং তার পরিবারকে জিম্মি করে বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিবিসিসহ দেশের কিছু গণমাধ্যমে আজকে তা প্রকাশ পেয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ করতে ও গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে গতকাল ভোটারবিহীন সংসদে বির্তকিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হলো। এটি সংবিধানবিরোধী একটি আইন। কারণ এটি সংবিধানের মূল চেতনা, বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে।এই কালো আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা। আমি এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী ও মুক্তচিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠন করেন তিনি; চারটি সংবাদপত্র ছাড়া অন্য সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গণমাধ্যমসহ যে কোনো মাধ্যমইে যাতে দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশিত না হয় সেজন্য এই ন্যাক্বারজনক কালো আইন তৈরি করা হয়েছে।এই আইনের কারণে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লো। কারণ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিস ঢুকে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাতে পারবে, কম্পিউটারসহ সকল কিছু সীজ করতে পারবে, যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না।বুধবার জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়।এই আইনের ৩২ ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে সরকারি কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক্সের মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্যকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অপরাধ সংঘটন ও সংঘটনে সহায়তার দায়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে ৫দিনের রিমান্ডে নেওয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসায় সন্ত্রাসী হামলা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীর বাসভবনে পুলিশি তল্লাশির ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী।
নাটোর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আলম আবুল ও জেলা ছাত্র দলের সভাপতি কামরুল ইসলামসহ ৭ জনকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের জনসমক্ষে হাজির করারও দাবি জানান তিনি।কয়েকটি গণমাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সংবাদকে বানোয়াট ও আজগুবি’ বলে অভিহিত করে এই ধরনের সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান রিজভী।সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।