কুড়িগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রভাবশালী একটি পরিবার কবরস্থানের জায়গা জবরদখল করে ঘর তুলে প্রতিপক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। হাইকোর্টের রায়ের পরও দখল নিতে না পেরে এক প্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারটি। এনিয়ে রাজারহাট থানায় একাধিকবার অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের মনারকুটি চৌকদিার পাড়ায় মৃত: রহিম উদ্দিনের পূত্র আখের আলী (৩৫) এর সাথে প্রতিবেশী আবেদ আলীর পূত্র আসাদ মিয়ার ২০ শতক বসত ভিটা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এনিয়ে কোর্টে মামলা করা হলে রায় পায় আখের আলী গং। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আখের আলীর বাড়ীতে চড়াও হয় আসাদ আলী গং’র লোকজন। তারা জমি দখলকে কেন্দ্র করে আখের আলীর লোকজনের উপর জখম হামলা চালায়। পিটিয়ে আহত করে বেশ কয়েকজনকে। এনিয়ে রাজারহাট থানায় ১২/১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে আসাদ আলী গং। তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী ও স্বজনরা মিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ২৯ আগস্ট সকালে আখের আলীর পরিবারের উপর নির্যাতন চালায়। এসময় গাছপালা কেটে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানের উপর চালাঘর নির্মাণ করে। আখের আলীর বাড়ীর প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেয়।
আখের আলী জানান. আমার দাদা হায়াৎ মামুদ প্রায় ৭০ বছর পূর্বে এই জমি ক্রয় করেন। তারপর থেকে আমার বাপ-দাদাসহ আমরা ভোগদখল করে আসছি। বেশ কয়েক বছর ধরে জমির মালিকানা দাবি করে আসছে আসাদ মিয়া ও তার স্বজনরা। পরে আমরা বিজ্ঞ আদালত থেকে ৩টি রায় পাই। আমরা উচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা করি। এরপর থেকেই মামলা তুলে নিতে আমাদের উপর হামলা, ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করা হয়। সর্বশেষ তারা আমার দাদা-বাবা-মাসহ ৬জনের কবরের জায়গা দখল করে একটি টিন শেডের ঘর তোলে। জমিজমার কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুরব্বিরা সমাধানের জন্য চেষ্টা করলেও তারা কোন বিচার মানেনা।এনিয়ে আসাদের ছোট ভাই জয়নুল মিয়া জানান, আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে রেখেছি। কবরস্থানে ঘর তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে কোন কবর ছিল না। স্থানীয়ভাবে সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন গ্রামবাসী আমাদের পক্ষে কথা বলে না, তাই তাদের বিচারও আমরা মানি না।
নাজিমখান সরকার পাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আফজালুল হক জানান, আমি ত্রিশ বছর যাবৎ এই গ্রামের মসজিদে ইমামতি করছি। যেখানে জবর দখল করে টিনশেড ঘর তোলা হয়েছে সেখানে কবরস্থান ছিল। আমি নিজেই জানাযা নামায পরিয়ে মোর্দাকে কবরস্থ করেছি। জয়নুলের দাবি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, আখের আলী ও আসাদ মিয়া গং এর জমিজমা সংক্রান্ত কলহ দীর্ঘদিনের। এলাকার শান্তি বজায় রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যত্তিবর্গ বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালিশে আসাদ মিয়া গং তা অগ্রাহ্য করে আসছে। তারা এলাকার কাউকে মানে না।
নাজিমখা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান জিল্লু জানান, আসাদ মিয়া গং আখের আলীর বসতবাড়ি দখল ও গাছপালা কাটার খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে পারিনি। পরে আখের আলী গং থানার স্মরণাপন্ন হয়। এখন পর্যন্ত বিষয়টি এমন অবস্থায় রয়েছে। আমরাও চাই এলাকার শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য দ্রুত আইনী প্রক্রিয়ায় এটা সমাধান হোক।