চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন আত্মহত্যা করেছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে তদন্ত সংস্থা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার তাসফিয়া হত্যা মামলায় চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আদনানের সাথে ঘটনার এক মাস আগে সম্পর্ক শুরু হয় তাসফিয়ার। বিষয়টি জেনে তাসফিয়ার পরিবার তার কাছ থেকে মোবাইলের সিম নিয়ে ফেলে। আদনানের সাথে সম্পর্ক না রাখতে চাপ সৃষ্টি করে। এরপরও গোপনে তারা সম্পর্কে রাখে।’
‘সম্পর্কের এক মাসপূর্তি উদযাপন করতে তারা ১ মে এক সঙ্গে বের হয়। বিষয়টি জেনে ফেলে তাসফিয়ার মা। ফলে লজ্জায় তাসফিয়া পতেঙ্গায় নদীর তীরে নেভাল বিচে চলে যায়। সেখানে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় বসে থাকে। পরে নদীতে নেমে আত্মহত্যা করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ১৬ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।’
এর আগে ২ মে সকালে কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গার ১৮ নম্বর ঘাটে পাথরের ওপর উপুড় হয়ে থাকা অবস্থায় তাসফিয়ার লাশ পাওয়া যায়। নগরীর সানসাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তিনি। ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে নগরীর আরেকটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আদনানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় বলে পরিবারের ভাষ্য। লাশ উদ্ধারের আগেরদিন বিকালে আদনানের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তাসফিয়া। আদনান ও তাসফিয়া নগরীর গোলাপাহাড় মোড়ে ‘চায়না গ্রিল’ নামে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খান। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে দুজনে দুটি অটোরিকশায় উঠে চলে যান বলে সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানিয়েছে পুলিশ। তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদনানকে থানায় ডেকে আনা হয়। পরে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিনের করা মামলায় আদনানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদনানকে একাধিকবার হেফাজতে নেয় পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ভিসেরা প্রতিবেদন এবং সাক্ষীদের দেওয়া তথ্য ও সার্বিক তদন্ত করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তাসফিয়া আত্মহত্যা করেছেন। ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসফিয়া পানিতে ডুবে মারা গেছে। ১ মে রাতে তাকে পানিতে নামতে দেখেছেন সাক্ষীরা। পরে চিৎকারের শব্দ হলে সাক্ষীরা পানিতে নেমে তাসফিয়াকে খুঁজে পাননি। পরে সকালে লাশ পাওয়া যায়।’ গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্টে তাসফিয়ার শরীরে বিষক্রিয়ার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, ধর্ষণের কোন প্রমাণও নেই। আসামিদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেও হত্যার কোন প্রমাণ মিলেনি।’ মামলাটি প্রথমে পতেঙ্গা থানা পুলিশ তদন্ত করলে রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারেনি। পরে নগর গোয়েন্দা পুলিশকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। মামলাটি তদন্ত করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক স্বপন সরকার।