বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কারণ ছাড়াই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে গায়েবি মামলা করা হয়েছে তিন হাজারের অধিক।তিনি বলেন, এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে নামে- বেনামে প্রায় তিন লাখ নেতাকর্মীকে।গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫০০-এর অধিক নেতাকর্মীকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। রিজভী বলেন, পোলিও টিকা খাওয়ানোর একটি স্লোগান আমরা অনেক দিন ধরে শুনে আসছি- বাদ যাবে না একটি শিশু’। এখন সরকার এই স্লোগানটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর।
অর্থাৎ মামলা-হামলায় বাদ যাবে না একটিও বিএনপি নেতাকর্মী’। দেশে এখন মানুষ নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে। মনে হয় দেশের প্রতিটি মানুষকে কেউ না কেউ অনুসরণ করছে, গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ক্রমাগত বিস্তৃতি ঘটছে, তার ওপর রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে এমন কোনো বিএনপিসহ বিরোধী দলের মানুষ বা সমর্থক নেই, যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে।রিজভী বলেন, জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেয়ার কথা; অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। দেশে বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপরও হামলা হয়েছে।বিএনপির এ নেতা বলেন, কোথাও আওয়াজ শুনলেই সেখানে সরকারি হামলা ধেয়ে আসছে। পরোয়ানা, গ্রেফতার, হাজতবাস ও নিষ্ঠুর বিচার এখন মানুষের নিয়তি। শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে এ সরকার অপরাধী বানাচ্ছে।সরকারের এ অপরাধের তালিকায় আছেন কোমলমতি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, শিল্পী, আলোকচিত্রী, সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, যাত্রীকল্যাণের মহাসচিব মোজাম্মেল হকের ন্যায় নিরীহ নাগরিক, শিশু, বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বাদ যাননি কবরে শায়িত লাশ, প্যারালাইজড রোগী, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি, পবিত্র হজব্রত পালনরত ব্যক্তিও।’
রিজভী বলেন, সরকারপ্রধানের মনে ত্রাস ও ভয়ের সৃষ্টি হওয়ায় দেশজুড়ে চলছে সরকারি জুলুমের আতিশয্য। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে কুর্নিশ করতে হবে, কোনো সমালোচনা চলবে না- এর ব্যত্যয় হলেই তার ঠাঁই হবে কারাগারে। এই তুঘলকি শাসন এখন চলছে বাংলাদেশে।গতকাল দিন-রাতে পুলিশ মামলা হামলার বন্যা বইয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মতিঝিল থানায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া এবং পল্টন থানার একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালামসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে।আমি দলের পক্ষ থেকে এই অসত্য ও বানোয়াট মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।
রিজভী বলেন, এ ছাড়া গতকাল দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম,বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীবিষয়ক সম্পাদক এমএ মালেক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক নায়ক উজ্জ্বল,জাসাস সাধারণ সম্পাদক নায়ক হেলাল খান, সহমহিলাবিষয়ক সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ বহু নেতৃবৃন্দের বাসায় পুলিশ হানা দেয় এবং তল্লালির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। দেশের বিশিষ্ট ও জাতীয় রাজনীতিবিদদের বাসভবনে পুলিশ কর্তৃক তল্লাশির নামে এই ন্যক্কারজনক তাণ্ডবের ঘটনায় আমি দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী সরকার ভীরু ও কাপুরুষ, তাদের কোনো সাহস নেই। আছে শুধু ভয় ও আশঙ্কা। যদি সাহস থাকত তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় অপরিণামদর্শী স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার এখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। যে কোনো মুহূর্তে পিছলে যাওয়ার ভয়ে তারা পুলিশের ওপর নির্ভর করে মামলা হামলা ও গ্রেফতারের শৃঙ্খলে জনগণকে বন্দি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে বলে মন্তব্য করেছে তিনি।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জনগণ মনের ক্ষোভ চেপে রাখতে অধৈর্য হয়ে উঠেছে। তাই সর্বত্র প্রতিবাদের সোচ্চার ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে ধেয়ে আসা জনগণের ঘূর্ণিঝড় রুদ্ররূপ ধারণ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।