ব্রিটিশ ভারতের করদ রাজ্য হায়দরাবাদের নিজামের যাদুঘর থেকে চুরি যাওয়া মূল্যবান সামগ্রীগুলো উদ্ধার করা হয়েছে মুম্বাইয়ের এক বিলাসবহুল হোটেল থেকে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট্য সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে ছিল করদ রাজ্যের শাসক নিজামের সোনার টিফিন বাক্স। চার কেজি সোনা দিয়ে তৈরি তিন-স্তরের টিফিন বাক্সটিতে হীরা এবং চুনি ও পান্নার মতো মূল্যবান পাথর বসানো। যার মূল্য কয়েক কোটি রুপি। এছাড়াও ছিল চুনি-পান্না বসানো একটি সোনার কাপ, বাটি, ট্রে ও চামচ। এসব সামগ্রীর সবগুলোই পাওয়া গেছে গ্রেফতার দু’জনের কাছে। ফলে হলিউড-স্টাইলের এই চুরি রহস্যের সমাধান হওয়ার পর এখন পুলিশের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে মজার মজার সব তথ্য।
পুলিশ বলছে, হায়দরাবাদের নিজাম নাকি কখনোই সোনার টিফিন বাক্সটি ব্যবহার করেননি। কিন্তু চোরদের একজন গত কয়েকদিনে খাওয়া-দাওয়ার জন্য প্রতিবারই এই বাক্সটি ব্যবহার করেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই দু’জন হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির একটি ঘুলঘুলির লোহার গরাদ কেটে ওই জাদুঘরে প্রবেশ করে ।
‘তারা ঠিক যখন সোনার প্রচ্ছদবিশিষ্ট একটি মূল্যবান কোরআন শরিফ নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত বাড়ায়, ঠিক তখনই কোন একটি মসজিদ থেকে ফজরের আজান শুরু হয়। এতে তারা ভয় পেয়ে যায় এবং কোরআন শরিফটি চুরি করা থেকে বিরত থাকে’ বলছিলেন হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার আনজানি কুমার। চুরি যাওয়া জিনিসগুলোতে যে পরিমাণ সোনা আছে তার দামই এক কোটি ভারতীয় রুপির সমান, বলছে পুলিশ। আর দুর্লভ পুরোনো সামগ্রী বা ‘এ্যান্টিক’ হিসেবে এগুলোর মূল্য তারও অনেকগুণ বেশি। ‘তাই ধরুন দুবাইয়ের বাজারে এগুলোর দাম ৩০-৪০ কোটি রুপিও হতে পারে’- বলেন পুলিশ প্রধান। এই চোরেরা এতই বুদ্ধিমান ছিল যে জাদুঘরে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থাকলেও তাতে তাদের প্রায় কোন ছবিই ধরা পড়েনি। কারণ, তারা মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে এসেছিল এবং ক্যামেরাগুলোর মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। একটি ক্যামেরায় তাদের বাইকে চেপে চলে যেতে দেখা যায়। কিন্তু এতে তাদের চেনার মতো স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও পুলিশ তাদের হদিস পায়নি। পরে দু’জনই মুম্বাইয়ে পালিয়ে যায় এবং একটি পাঁচতারা হোটেলে ওঠে। সেখানে কয়েকদিন তারা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে।
কিন্তু মূল্যবান জিনিসগুলোর কোন ক্রেতা না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে। হায়দরাবাদে ফিরে আসার পরই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অভিযুক্ত দু’জনের একজনের নাম গাউস, তার বয়স ২৫ এবং সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২৬টি মামলার হুলিয়া রয়েছে। তার সঙ্গীর বয়স অপেক্ষাকৃত কম, কিন্তু ওই ঘটনার সেই মূল পরিকল্পনাকারী। চুরির আগে তারা ৫-৬ মাস ধরে পরিকল্পনা এবং রেকি বা পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে।