নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (এফইএমবিওএসএ-ফেমবোসা) এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমরা তাকে বলিনি। তার এভাবে বলা উচিৎ হয়নি। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। মিডিয়ার সামনে বললাম, অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন। এটা তার কাজ নয়। এভাবে বলা তার ঠিক হয়নি ।অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম।এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ফেমবোসা সম্মেলন সম্পর্কে জানান, ৯ দফা ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ সম্মেলন শেষ হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি ( কে এম নূরুল হুদা) এর চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নিয়েছেন।তিনি জানান, ফেমবোসার আগামী সম্মেলন ভুটানে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত,একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের; তবে সেই ভোটের সম্ভাব্য একটি তারিখ আগেই বলে দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।বুধবার তিনি বলছেন, নির্বাচন হতে পারে আগামী ২৭ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে ২৫ সেপ্টেম্বরের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হতে পারে।সংবিধান অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের সামনে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও এর আগে বলেছিলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তবে অর্থমন্ত্রীর দেওয়ার তারিখের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেলালুদ্দীন বুধবার বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মন্ত্রীর আলোচনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।নির্বাচন কমিশনে ভোটের তারিখ নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তফসিল ঘোষণার সময় দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। এ নিয়ে ওই সময়ই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।অবশ্য বুধবার সচিবালয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অর্থমন্ত্রী অত ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে যাননি।তিনি সরাসরিই বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলে জেনেছি তারা প্রস্তাব দিচ্ছে ২৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন করার জন্য। ডিসেম্বরের খুব বেশি ডেইট নেই, আজকে শহীদ দিবস বিজয় দিবস অনেক কিছু থাকে। আমার মনে হয় দুই তিনটা ডেইট ছাড়া পাওয়া যায় না। ২৭ তারা করেছে, ২৭ এ নির্বাচন হওয়ার চান্স খুব বেশি। এখনো নির্বাচন কমিশন শিডিউল ঘোষণা করেনি, ঘোষণা করলে সুনির্দিষ্ট দিন পাওয়া যাবে।

এই সম্ভাবনা সামনে রেখে আগামী ২০ দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানান মুহিত।তিনি বলেন, একটি ছোট নির্বাচনকালীন সরকার হবে, এখানে সব পার্টির লোক থাকবে। নতুন কোনো ক্যারেক্টার আসবে না। তবে বিএনপি পার্লামেন্টে না থাকায় তাদের চান্স নেই। আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার হবে, কারণ ২৭ ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে ২৫ বা ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে, এটা আমার ধারণা।

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন পরিচালনা ও প্রশাসনের বেশ কিছু ক্ষমতা চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। সরকার কেবল রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন কাজগুলোই করবে।ওই সময় সরকার পরিচালনার জন্য ২০১৩ সালেও মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে থাকা সব দলকেই সেই মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যদিও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মত একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পরে দশম সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সেই দাবির সঙ্গে দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যুক্ত করে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, দাবি পূরণ না হলে ‘দেশের জনগণ’ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।তবে অর্থমন্ত্রীর বিচারে নির্বাচনের জন্য দেশে এখন ‘ভালো পরিবেশ’ বিরাজ করছে।আমার নিজস্ব ধারণা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। বিএনপি এবার যদি ইলেকশন না করে তবে হারিয়ে যাবে, এটা তাদের বুঝতে হবে। আমার ধারণা নির্বাচনে চুরি চামারি করা মুশকিল।