ইসরায়েলকে ইহুদি জাতিরাষ্ট্র ঘোষণা করে করা নতুন আইনের বিরোধিতায় সমাবেশ করেছে আরব সংখ্যালঘুরা।শনিবার তেল আবিবে হাজারখানেক বিক্ষোভকারী এ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।গত মাসে পাস হওয়া এ ইহুদি জাতিরাষ্ট্র আইন ইসরায়েলের ভূখন্ডে বসবাসকারী আরব সংখ্যালঘুদের ক্ষুব্ধ করেছে; বিশ্বের অনেক দেশও এর সমালোচনা করছে।রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা থেকে আরবিকে নামিয়ে দেওয়া ও কেবলমাত্র ইহুদিদেরই আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়া আইনটির পক্ষে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।ইহুদিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ ধরনের বিধান জরুরি হয়ে পড়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ক্ষমতাসীনদের ‘চাপিয়ে দেওয়া এ আইনের’ বিরুদ্ধে শনিবার তেল আবিবের রাস্তায় ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় ইসরায়েলি আরবরা; তাদের হাতে থাকা নিদর্শনগুলোতে আরবি ও হিব্র“ ভাষায় লেখা ছিল ‘সমতা’র কথা।
এ আইন বর্ণবাদকে স্বীকৃতি দিল। আমরা যে এর বিরুদ্ধে এখানে প্রতিবাদ করতে এসেছি, তা দেখানো খ্বুই গুরুত্বপূর্ণ, বলেন দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেব মরুভূমির একটি বেদুইন গ্রাম থেকে আসা ১৯ বছর বয়সী লাইলা আল-সানা।ইসরায়েলের আরব জনগোষ্ঠী ১৯৪৮ সালে আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্র গড়ে ওঠার সময় চলা যুদ্ধের পর দেশটির ভূখ-ের ভিতরে থেকে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের বংশধর।ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের অনেককেই ফিলিস্তিনি হিসেবেও গণ্য করা হয়। এদের সংখ্যা দেশটির ৯০ লাখ জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ।ইসরায়েলি আইনে অন্যদের মতো সমান অধিকার দেওয়া হলেও আরবরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্যের শিকার। আরবদের সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করে আসছিলেন তারা। যখনি আমি আইনটির কথা শুনেছি, মনে হয়েছে আমার অবশ্যই নিজের শহর, আমাদের ও পূর্বপুরুষের ভূমি রক্ষা করা উচিত,বলেন শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ৬৮ বছর বয়সী শিখা দাব্বাহ।
ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির ৭০ বছরের মাথায় পাস হওয়া নতুন এ জাতিরাষ্ট্র আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান জানাতে বিক্ষোভে ছিলেন অনেক ইহুদিও।এখানে যারা বসবাস করছে তাদের সবার প্রতি উদার না হয়ে ৭০ বছর পর (ইহুদি) জাতীয়তাবাদের ঝোঁক দেখে আমি লজ্জিত,বলেন আরব-ইহুদি শহর হাইফা থেকে আসা ৫৮ বছর বয়সী ইহুদি ধর্মাবলম্বী গিলা জামির।বিক্ষোভকারী কয়েকজনের ফিলিস্তিনি পতাকা নাড়ানো ও ‘রক্ত এবং চেতনা দিয়ে আমরা ফের একত্রিত হবো, ফিলিস্তিন’ স্লোগানের একটি ভিডিও নিজের টুইটার পেইজে শেয়ার করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, জাতিরাষ্ট্র আইনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে এর চেয়ে ভালো কোনো প্রমাণ হতে পারে না।বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি পতাকার পাশাপাশি কিছু ইসরায়েলি পতাকাও যে ছিল বেশ কয়েকটি টেলিভিশনের ফুটেজে তা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।সমালোচকরা শুরু থেকেই এ জাতিরাষ্ট্র আইনকে ‘অগণতান্ত্রিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে আসছেন। এর মাধ্যমে ইহুদি ও অ-ইহুদিদের মধ্যে পার্থক্য করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
তবে আইনটির সমর্থকরা বলছেন, ইহুদিদের জন্য বিশেষ রাষ্ট্র ঘোষণা করা হলেও ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের সমঅধিকারের বিষয়টি অক্ষুন্নই থাকছে।এ আইন বর্ণবাদ উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন আরব নেতারা। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও প্রবাসী ইহুদি সংগঠনগুলোও নতুন এ আইনের বিরোধিতা করেছেন। জাতিরাষ্ট্র আইনের বিরোধিতা এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মিশরের কাছ থেকেও।ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রভেন রিবলিনও প্রতিবাদস্বরূপ আইনটিতে আরবিতে স্বাক্ষর করবেন বলে বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।আরব সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভের আগে গত সপ্তাহের শনিবার দ্রুজ সম্প্রদায়ও এ জাতিরাষ্ট্র আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের ‘অনুগত সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত দ্রুজদের এ অবস্থান কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে তেল আবিবেরও। দেশটির সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীতের দ্রুজদের প্রবেশাধিকার আছে, অনেকেই এসব বাহিনীর জ্যেষ্ঠ পদও অলঙ্কৃত করেছেন।