তড়িঘড়ি করে মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে দুর্বৃত্ত ও গডফাদাররা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকবে। এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। যদিও এ আইন আদৌ সংসদে পাস হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর এমন মন্তব্য আসে।তিনি বলেন, এই আইন গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আদৌ সংসদে এটি পাস হবে কি না তা নিয়ে নাগরিকরাও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই আইন ‘যথেষ্ট’ হবে বলে তারা মনে করছেন না।প্রস্তাবিত আইনে দুর্বৃত্ত ও গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি।তিনি বলেন, এ আইন নিরাপদ সড়কের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ আইনের ফলে গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর বাড়িয়ে পাঁচ বছরের কারাদন্ড করা হয়েছে। কিন্তু রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল মৃত্যুদন্ড।

নতুন আইনের খসড়া অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যদি কোনো চালক হত্যাকান্ড ঘটান, তবে দন্ডবিধির ৩০২ কিংবা ৩০৪ ধারা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ৩০২ ধারায় খুনের অপরাধে মৃত্যুদন্ডে র বিধান রয়েছে। আর দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ওই পাঁচ বছরই।রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘হামলার’ নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে থেকে আওয়ামী অস্ত্রধারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগ একাকার- এটা দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের নাম ধরে ধরে ছবি প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ এবং সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী।ওই মামলায় রিজভীসহ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আসামি করেছেন মামলার বাদী বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।রিজভী বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে, যেমন আরও রাজনৈতিক দল দিয়েছে। আমরা মনে করি তাদের নিরাপদ সড়কের দাবি ন্যায্য দাবি। আর এটা উসকানি হয়ে গেল!

এই বিএনপি নেতা প্রশ্ন করেন- আন্দোলনের প্রথম দিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সরকারের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। আপনারা তাদের সাদুবাদ জানালেন। ওই কথা যদি উসকানি না হয়, তাহলে বিএনপি কোথায় উসকানি দিল?শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার জিগাতলায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী।

উনি বলেছেন সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেনি। কারা হামলা করেছে তালিকা দেন। আমি বিচার করব।ওবায়দুল কাদের সাহেব সাংবাদিক ছিলেন বলে আমি জানতাম। কিন্তু তিনি এখন গণমাধ্যমে চোখ রাখা ভুলে গেছেন বলে এই ধরনের অন্ধ, অজ্ঞ, অর্বাচীনের মত কথা বলছেন।রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব ছাত্রলীগের রাম দা, পিস্তাল, লোহার রড, লাঠি দেখতে পান না। মানুষ তার বক্তব্যকে কমিক এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে ধরে।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।