তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় দৃক ফটোগ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শহিদুল আলমকে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে হাজির করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আরমান আলী। পুলিশের ওই কর্মকর্তা শহিদুল আলমকে মহানগর হাকিম ফহাদ বিন আমীন চৌধুরীর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ওই মামলায় এখন শুনানি চলছে।

সোমবার দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, সোমবার ভোররাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলকে কোন বিষয়ে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে- সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারেরও সমালোচনা করেন।

এরপর রোববার রাতে শহিদুল আলমকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়।তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদের বরাত দিয়ে দৃকের কমিউনিকেশন অফিসার আমিনা নেয়ামত রাতে বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে ধানম-ি থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও ১২টার দিকে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা ধানম-ি থানা থেকে আমাদের বলা হচ্ছে না।আনমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ রাতে বলেন, শহিদুল আলমকে কে বা কারা তার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ জানাতে থানায় এসেছেন। কিন্তু তাকে ধানম-ি থানায় আনা হয়নি।

দৃকের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে জোরপূর্বক’ তার ধানমন্ডির বাসা থেকে ‘অপহরণ করা হয়েছে’। অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ান ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ৩০ থেকে ৩৫ জন সাধারণ পোশাকের লোক নিজেদের ‘ডিবি’ পরিচয় দিয়ে শহিদুলকে বাসা থেকে নামিয়ে আনেন।তাকে জোর করে বাইরে অপেক্ষারত একটি গাড়িতে তোলার সময়ে তিনি চিৎকার করছিলেন। গাড়ির গায়ে লেখা ছিল, ‘পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স’। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহিদুলকে নিয়ে যাওয়ার সময় ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে তালাবন্ধ করে রেখে যাওয়া হয়। আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে বাসা থেকে গতকাল রোববার রাতে অপহরণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।

রেহনুমা অভিযোগ করেন, গতকাল ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের বাসার চারতলা থেকে শহিদুলকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা শাখা) পরিচয় দেওয়া একদল লোক। একটু আগে তিনি সংবাদমাধ্যমে জেনেছেন, শহিদুলকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল সারা রাত ডিবি অফিসে বসে থেকেও শহিদুলের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাননি তিনি। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন করে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে যেতে বলা হয়েছে। রেহনুমা লিখিত বিবৃতিতে বলেন, শহিদুলকে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে তারা হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। তিনটি গাড়িতে তারা এসেছিল। নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন নিয়ে নিয়েছিল। কাউকে কথা বলতে দেয়নি।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, নারীনেত্রী শিরিন হক, এনজিওকর্মী তাহমিনা রহমান প্রমুখ।