চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জনের হজব্রত পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট ১৫৪টি ফ্লাইটে ৫৫ হাজার ৭২৪ জন যাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তবে সৌদি দূতাবাস থেকে ভিসা পাওয়া গেছে ৯১ হাজার ২১৮টি। ভিসা হতে বাকি এখনও ৩৫ হাজার ৫৫০ জনের। এজন্য টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। সৌদি দূতাবাস ৭ আগস্টের পর আর কোনো ভিসা দেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
হজ অফিস সূত্রে জানা যায়, ভিসার জন্য ডিও ইস্যু করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৬৪ জনের। এর মধ্যে বেসরকারি ৮৭ হাজার ৫৭৮ জন ও সরকারি ৬ হাজার ৪৮৬ জনের। এর মধ্যে সৌদি দূতাবাস থেকে ৯১ হাজার ২১৮টি ভিসা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকারি ভিসা ৬ হাজার ৪৮৬টি এবং বেসরকারি ভিসা ৮৪ হাজার ৭৩২টি। এখনও ৩৫ হাজার ৫৫০ জনের কোনো ডিও ইস্যু হয়নি। অন্যদিকে শনিবার (২৮ জুলাই) হজযাত্রীদের পরিবহনের জন্য সৌদি এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই এয়ারলাইন্সের দু’টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। শুক্রবার পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় বাতিল করা হয়েছে দু’টি ফ্লাইট।
ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সব এজেন্সিকে বলেছি তারা যেনো দ্রুত ভিসা সংগ্রহ করেন। বারবার এজেন্সিগুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কারণ আগামী ৭ আগস্টের পর আর কোনো ভিসা দেবে না সৌদি দূতাবাস। এখনও অনেকে সাড়া দেননি। শুক্রবার দূতাবাসের ছুটির দিন হওয়ায় আমরা কিছু ভিসার আবেদন পাঠাতে পারিনি, যেগুলো আজ চলে গেছে। এজেন্সির ভালো সাড়া পেলে আশা করি দূতাবাসের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই ভিসার কাজ শেষ হবে। আর যদি কোনো এজেন্সি সাড়া না দেয় তাহলে হয়তো তার হজযাত্রীদের এবার যাওয়া হবে না।হজ এজেন্সি অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, আমাদের অনেক এজেন্সি এখনও রিপ্লেসমেন্টের পর কাগজ হাতে পায়নি। অনেক এজেন্সি এখনও সৌদি আরবে আছে, সেখানে তারা হজের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করছে। তারা আজকাল এলেই ডিও ইস্যু করবে। তাছাড়া এ কাজটি চলমান। অনেক হজযাত্রী ইতোমধ্যে সৌদি আরবে চলে গেছেন। গত বছরের মতো কোনো পরিবেশ এবার হবে না। সব হজযাত্রীই এবছর হজ পালনে সৌদি যাবেন।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি যাবেন ৬ হাজার ৭৯৮ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১ লাখ ২০ হাজার। এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫২৮টি এজেন্সি হজের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।আবারও রিপ্লেসমেন্ট হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব। সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনস মিলিয়ে ১১ হাজারেরও বেশি টিকেট এখনো অবিক্রিত রয়েছে।
নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী মারা গেলে বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে যেতে না পারলে অন্য কাউকে হজ করার সুযোগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে এবারও চার শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট রেখেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু, এই অতিরিক্ত চার শতাংশ যাত্রী পাওয়ার পরও প্রায় চার হাজার রিপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন বলে জানায় হাব।শনিবার হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, ‘দু-একদিনের মধ্যে এই সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। কারণ, এই সমস্যাটি এটার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরে, সেটা কিন্তু আরো অনেক প্রস্তুতি আছে, প্রসেসিং আছে। তারপরে সেটা ভিসা কালেকশান হবে। সঙ্গত কারণে, সাত তারিখ পর্যন্ত সেটার জন্য কোনোভাবেই অপেক্ষা করা যাবে না। রিপ্লেসমেন্টের ঘোষণাটি আসতে হবে। শিগগিরই দু-একদিনের মধ্যে। যদি রিপ্লেসমেন্ট না দেওয়া হয়, তাহলে এক লাখ ২৭ হাজার যে হজযাত্রী আমাদের এখান থেকে যাবে, সে সংখ্যাটি তো আর যাচ্ছে না। তাহলে আসন ফাঁকা যাওয়াটাই স্বাভাবিক।অন্যদিকে,এ রিপ্লেসমেন্টের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানিয়েছে হজ অফিস।
হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি তো আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। এটি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে যে, এরা অতিরিক্ত পাবে কি পাবে না। এটি আগে যেমন পরবর্তী সময়ে চার পারসেন্ট বৃদ্ধির সময় যেভাবে আবেদন করেছে। আবেদনের সুবিধা-অসুবিধা যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সময়ে, পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এখন যদি তারা আবারও নতুনভাবে চায়, আবেদন করেন, হাবের নেতারা আছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান এজেন্সির সংগঠন আছে। তারা যদি বলে, সেগুলো দেখেশুনে এগুলো বিবেচনা করবে।শুক্রবার যাত্রীর অভাবে বিমানের দুটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। গত রাত ১২টা পর্যন্ত সৌদি আরব গেছেন মোট ৬০ হাজার ছয়জন। তবে, আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। আজ হ্জ ফ্লাইট রয়েছে মোট ১০টি।আজ এক হজযাত্রী বলেন, আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, আল্লাহ যেন আমার হজটি কবুল করেন। ছেলেমেয়ে, বিবি-বাচ্চা সবার জন্য দোয়া করব।