রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান জানান, ওই তিন সিটির ভোটার নন এমন বহিরাগতদের শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আজ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মনোনীত প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের নিয়ে শেষবারের মতো সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. মুরাদ মোর্শেদ (হাতি)।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মো. মজিবুর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের মণীষা চক্রবর্তী (মই) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল)।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দীন আহম্মদ কামরান (নৌকা), বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের-বাসদ মো. আবু জাফর (মই) এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী এহসান মাহবুব জোবায়ের (টেবিল ঘড়ি), মো. এহসানুল হক তাহের (হরিণ) ও মো. বদরুজ্জামান সেলিম (বাস)। তিন সিটিতে ৫৩০ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজশাহী সিটিতে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র ও এক হাজার ২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। বরিশাল সিটিতে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১২৩টি ভোটকেন্দ্র ও ৭৫০টি ভোট কক্ষ রয়েছে এবং সিলেট সিটিতে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১৩৪টি ভোট কেন্দ্র ও ৯২৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে।
নির্বাচনের নিরাপত্তায় ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে থেকে তিন সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম এবং প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে ১৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এঁরা নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। আরো চার প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ রাখা হয়েছে বলেও ফরহাদ আহম্মদ খান জানান।
আচরণবিধি দেখভাল করতে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ আহম্মদ খান আরো বলেন, ১৪ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ২৪ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। ১০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট এই ২৩ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। এ ছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে পরের দিন পর্যন্ত আচরণ বিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতি সিটিতে ২০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আজ থেকে পরবর্তী চারদিন রাজশাহী ও বরিশালে ১০ জন করে এবং সিলেটে ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। বরিশাল সিটি করপোরেশনে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৬৬ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন।
কমিশন সূত্র জানায়, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এ নির্বাচনে ভোটের আগের দুদিন থেকে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকছে। প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। বাকি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাসসকে বলেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বরিশালে ১০টি, রাজশাহীতে দুটি ও সিলেটে দুটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। রাজশাহী সিটিতে সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বরিশালে মুজিবুর রহমান ও সিলেটে মো. আলিমুজ্জামন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।