রাজশাহীতে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ নিয়ে মোটামুটি দিন ভালোই কাটছিল ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের। গত ১০ জুলাই প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে চলছিল নির্বাচন কার্যালয়ে রোজ একটি করে অভিযোগনামা দাখিল আর দিনভর গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচার মিছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ১৭ জুলাই দৃশ্যপট পাল্টে যায় অনেকটাই। ওইদিন সকালে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী বুলবুলের গণসংযোগস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ হয়।
কিন্তু প্রথমদিকে ঘটনাটির দায় প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে খানিকটা সুবিধা নিতে না নিতেই বেরিয়ে পড়লো থলের বেড়াল! এর পরের ঘটনা সবারই জানা। ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে দুই বিএনপি নেতার অডিও ক্লিপ ভাইরাল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার, মামলা, রিমান্ড ইত্যাদি ঘটনায় চাপে পড়েন বিএনপি নেতা বুলবুল।তারপর থেকে ভোল পাল্টে গেছে। প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপানোর বদলে এবার নিজ দলের দুই নেতা নির্দোষ দাবি রেখে যুক্তি খন্ডন শুরু করেন বুলবুল। এখনও তা চলছে।নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটারদের সহানুভূতি ও সহমর্মিতা টানতে এই অপকৌশলে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়েছে বিএনপি এবং দলটির মনোনীত প্রার্থী বুলবুল। পুরো ঘটনাটিই তার জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে। এই ঘটনায় পুলিশ তো সক্রিয় হয়েছেই সঙ্গে সাধারণ ভোটারও তার কড়া সমালোচনায় রোজ চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন।
মুখে অনেক কথা বললেও এই ঘটনার প্রভাব আগামী ৩০ জুলাইয়ের ভোটের ওপর পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে তালগোলে থাকা বিএনপি শিবিরে। গত ২১ জুলাই গভীর রাতে জেলা বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের পর ২২ জুলাই দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর সঙ্গে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর কথোপকথনের অডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের শোনান মহানগর পুলিশ কমিশনার। ওই ফোনালাপে জেলা বিএনপি নেতা টিপুর কাছে দাবি করে বলেন, ভাইয়া’র (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নিতে গিয়ে নিজেদের লোকদের দিয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে। মন্টু ওই ঘটনায় বিএনপির কোন কোন নেতা জড়িত, তা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুর রহমান টিপুর কাছে মোবাইল ফোনালাপে অকপটে স্বীকার করেন।এ ঘটনার পর নিজের দলের নেতারা নির্দোষ দাবি করে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে তাদের দুই নেতার কথোপকথন তথ্য প্রযুক্তির কারসাজি। তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এ ধরনের অডিও বিশ্বাসযোগ্য নয়। মানুষ সেটি বিশ্বাস করে না। এটিও একটি ষড়যন্ত্র।
এরপর থেকে চাপের মুখে গণসংযোগ, পথসভা ও টকশো’য় ওই একই যুক্তি খন্ডন করে চলেছেন মেয়র প্রার্থী বুলবুল। তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বুলবুল জানান, এই ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন নন। মানুষ সব বোঝে। তারা এগুলো বিশ্বাস করে না বলেও দাবি করেন সদ্যবিদায়ী এই মেয়র। এদিকে, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নৌকার প্রার্থীকে নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজবের মুখরোচক খবর ততই চাউর হচ্ছে। ফলে শুরু থেকে প্রচারণা ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা এই প্রার্থীর মধ্যেও শেষ মুহূর্তে ভর করেছে গুজবের ভয়।আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারকে ভয় করছেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মনোনীত এবং মহাজোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন।
বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অপপ্রচারের বিষয়ে লিটন বলেন, অপপ্রচার যারা করেন, তারা এতোটাই সিদ্ধহস্ত, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অপপ্রচারে এতোটাই সিদ্ধহস্ত, তারা নন ইস্যুকে ইস্যু বানাতে খুবই পটু এবং একেবারে মিথ্যা বানোয়াটকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। লিটন বলেন, তারা বানোয়াট ছবি মানুষজনকে দেখায়। দেখানো হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মীর দ্বারা সাধারণ মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে-যেটি আদৌ সত্য না। এভাবে মিথ্যাকে ফলাও করে প্রচার করে তারা। তিনি বলেন, এরইমধ্যে তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে যে, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে উন্নয়নের নামে পুরো বস্তি এলাকা উচ্ছেদ করবো। এছাড়া ধানের শীষে ভোট না দিলে দেশ ছাড়া করার জন্য কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারও চালানো হয়েছে। আবার তারা বলে, আমি নগরীতে কোনও উন্নয়ন করিনি। সব উন্নয়ন হয়েছে আমার আগে। কিন্তু নগরবাসী বিষয়টি ভালোভাবে জানেন। এই অপপ্রচারে তাদের খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না।
নৌকার মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন অভিযোগ করেন, জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি প্রার্থী বুলবুল ও তার লোকজন এখন মিথ্যাচার করছেন। নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অতীতে বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হলে আমিই বাধা দিয়েছিলাম। কারণ যাদের আমরা পুনর্বাসন করতে পারবো না তাদের উচ্ছেদের অধিকার আমাদের নেই। আগামীতে মেয়র হলে আমি বস্তি উচ্ছেদ নয়, তাদের জীবনমানের উন্নয়নেই কাজ করবো। তাই যতই অপচেষ্টা করা হোক নির্বাচনের শেষদিন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। এজন্য ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না’।