কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ (৪) আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অব্দুর রহমান বদি তার গদি হারাতে যাচ্ছেন। বদির স্বপ্নভঙ্গের কারণ তার শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিজেই। জানা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিট হয়তো মিলছে না বদির ভাগ্যে। মরণ নেশা ইয়াবার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আবদুর রহমান বদির কুখ্যাতি আছে। তবে সে কারণে বদিকে কোনঠাসা হতে দেখা যায়নি অতীতে। পরপর দুই দফা বদি এই আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন সরকারি দলের টিকিটে। তবে এবার বুঝি আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না! ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের কাছ থেকে এমনটাই আভাস মিলছে। বাংলাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়ে কালো টাকার পাহাড় বানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিলেন এই ইয়াবা সম্রাট। একথা সবারই জানা। বদির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগে থেকেই বর্তমান রয়েছে। সরকারও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অনেকেই মনে করছেন তাহলে এটাই কী বদির শাস্তি!

এদিকে বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী আগে থেকেই উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তিনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এবারের সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর সে ইচ্ছার কথা এখন পুরোপুরি স্পষ্ট।

এ নিয়ে অনুসন্ধানের বেরিয়ে এসেছে আরও কিছু ভেতরকার তথ্য। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বদির সাথে তার স্ত্রী শাহীন চৌধুরীর মনোমালিন্যের জের ধরেই এমনটা ঘটছে।

বদির পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানায়, শ্বশুরবাড়ির সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে বদির। আর শ্যালক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় গত একমাস ধরে বদি ও তার স্ত্রী আলাদা বাসায় থাকছেন বলেও একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে।

বদির নিজের বাড়ির টেকনাফে হলেও শ্বশুর বাড়ি উখিয়া হওয়ার সুবিধা নিয়ে বিগত দুই সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন তিনি। কিন্তু এবার উখিয়া নিজস্ব প্রার্থী পেলে বদিকে সমর্থন দেবে না… এমনটাই ভাবা হচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফ (কক্সবাজার-৪) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এলাকাবাসীও এখন এমপি বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর কথাই গুরুত্বের সাথে ভাবছেন বলে তৃণমূল থেকে আভাস মিলছে।

‘লাকি’ আসন খ্যাত; কক্সবাজার-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার টিকেট পেতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন এমপি বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর চৌধুরী। বলা হচ্ছে, আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে দেশব্যাপী নানা সমালোচনা ও দলের হাইকমান্ডের দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নানা মতভেদ থাকার সুযোগকে কাজে লাগাতে চান বদির শ্যালক।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দাবি করে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণে জোরালো তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও তৃণমুলের ত্যাগী নেতাকর্মী থেকে শুরু উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের দুই মেয়াদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি ঢাকায় তৃণমুলের প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রেখে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনারও সু-নজরে এসেছেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। গণভবনে একসভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে গঠনমূলক বক্তব্যে উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সমস্যা ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী পরপর দুই বার প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্যের সুযোগ পাওয়ায় গণমাধ্যমেও তাঁর ব্যাপক পরিচিতি এসেছে। এতে উখিয়া-টেকনাফ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে উখিয়া-টেকনাফ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন।