দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের বৈঠকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী এরূপ যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।
একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদরের হেলমেট কনফারেন্স কক্ষে রোববার এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। এজন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।উপস্থিত জেনারেলদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন,আপনাদেরকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে। সেনাবাহিনীর যেসব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের উপর আস্থা রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য ট্রেইস (ঞধনঁষধঃবফ জবপড়ৎফ ধহফ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব ঊাধষঁধঃরড়হ) পদ্ধতি প্রচলন করা হয়েছে, যা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে।নির্বাচনী পর্ষদ উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন।প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের কথা স্মরণ করেন।১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন এবং ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা উন্নত, পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকে আমরা ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি।সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সেনাসদস্যদের মনোবল বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও কল্যাণমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।সেনা আবাসন প্রকল্প এবং বহুতল সরকারি পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণ করা, সেনাসদস্যদের উন্নতমানের ও বর্ধিত স্কেলে রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দুস্থ ভাতা বাড়ানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।সেনাবাহিনীর কমান্ডো সদস্য, এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকদের উড্ডয়ন ঝুঁকি বীমার আওতায় আনার কথাও বলেন তিনি।শেখ হাসিনা বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানা জনসেবামূলক কর্মকা-ের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সাথে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করছে।এই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।