ব্যাপক পরিবর্তন আসছে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইমিশনে। গত সোমবার জরুরি ভিত্তিতে মিশনের ডেপুটি হাইকমিশনারের শূন্য পদ পূরণের আদেশ জারি হয়েছে। মিশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে বসছেন বার্মিংহামে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের দায়িত্বপালনকারী মোহাম্মদ জুলকার নাঈন (পদোন্নতি আগেই পেয়েছেন)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে কাজ বুঝে নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে ঢাকা। মিশনের প্রেস মিনিস্টারের শূন্য পদও পূরণ হচ্ছে শিগগির। দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনকারী নাদীম কাদিরকে ফিরিয়ে আনার পরই পদটি শূন্য হয়। এর জন্য রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা মো. আশেকুন নবী চৌধুরীর নাম চূড়ান্ত। এ ছাড়া কনস্যুলার ও কল্যাণ শাখার দুই কর্মকর্তাকে দেশে ফিরতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিদেশনীতি ও মিশনগুলো দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা আভাস দিয়েছেন- লন্ডন মিশন নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের অস্বস্তি চরমে ওঠায় এর প্রধানসহ অন্যান্য পদেও পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। ব্রিটেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ওই মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই কাজ ফেলে রেখে নিজেদের মধ্যে ‘কূটচালে’ ব্যস্ত সময় কাটান বলে অভিযোগ। বেশিরভাগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই দায়িত্বে অবহেলা এবং মিশনে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগও বিস্তর।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায় কেন্দ্র করে লন্ডন মিশনে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় জাতির জনকের ছবিও। বিএনপির এই হামলা ঠেকানো এবং পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা আদায়ের প্রশ্নেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করে সরকার। আর সেই দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহাকে আগেই প্রত্যাহার করা হয়। তিনি মে মাসে ঢাকায় ফিরেছেন, বর্তমানে ছুটিতে। ওই ঘটনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি কাজ করছে; এখনো রিপোর্ট জমা পড়েনি। সেই ঘটনার পর থেকে মিশনের বিভিন্ন পদে পরিবর্তন এসেছে। অনেকে দেশে ফিরেছেন, অনেকে ফিরছেন। ২০১১ সাল থেকে মিশনে থাকা (কনস্যুলার শাখায় দায়িত্বরত) কর্মকর্তা শিরিন আক্তার এবং ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া (কল্যাণ শাখায় দায়িত্বরত) মনিরুল ইসলাম কবিরকেও দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের দুজনের পদে দেওয়া হচ্ছে নতুন নিয়োগ।
টেলিযোগাযোগ ক্যাডারের কর্মকর্তা শিরিন আক্তারের স্বামী বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হন। মানবিক কারণেই তাকে ডেপুটেশনে বিদেশ মিশনে পোস্টিং দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হলেও মিশনে তার দায়িত্বপালন নিয়ে তেমন বিতর্ক ছিল না। আর মনিরুল ইসলাম কবির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির আমলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। লন্ডনে তার নিয়োগ নিয়ে শুরুতে বিতর্ক থাকলেও পরে তিনি এটি কাটিয়ে ওঠেন। তা ছাড়া যে কোনো মিশনে সাধারণত তিন বছর থাকার অলিখিত নিয়ম থাকলেও কবির ও শিরিনের বেলায় এর ব্যতিক্রম হয়েছে। তবে মিশনে যাওয়ার পর দুই সন্তান রেখে কবিবের স্ত্রী (তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা) মারা যাওয়ায় এবং মানবিক কারণে শিরিনকে একটু বেশি সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় মিশনে থাকা ওই দুই কর্মকর্তাকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।’