আগামী ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনায় যাচ্ছেন। ১৪ জুলাই সকালে তিনি পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের (ফাষ্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি) উদ্বোধন করবেন এবং বিকেলে পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষন দেবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও তিনি পাবনা-ঈশ্বরদীর নুতন রেললাইন ও রেল চলাচলের উদ্ধোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পাবনায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। ভাঙাচোরা রাস্তা-ঘাট মেরামত, বিভিন্ন সরকারী ভবনের চুনকাম, রং করা নানা সৌন্দয্য বর্ধন, তোরণ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় মজবুত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।রাশিয়ান ফেডারেশনের সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের অর্থাৎ ফাষ্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি কাজের উদ্বোধন করেন। আর্ন্তজাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের রীতি অনুযায়ী ওই উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক জগতে প্রবেশ করেছে। প্রকল্প সূত্র জানান, প্রথম ইউনিটের কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। একইসাথে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করার জন্য সকল প্রাক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে এর মধ্যেই সরকারের স্থানীয় সকল দপ্তরে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ৩১টি দেশে ৪৩৭টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। গত বছর ৩০ নভেম্বর এফসিডি কাজের উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের ৩২তম পারমাণবিক দেশ এর স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। উদ্বোধনের পর থেকেই দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী গণ মাধ্যম কর্মিদের জানান, এই রিঅ্যাক্টর বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির। ৫ স্তরের নিরাপত্তা বিশিষ্ট এই প্রযুক্তি রাশিয়ায় শুধুমাত্র একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রয়েছে। বাংলাদেশের রূপপুরে এটি হবে দ্বিতীয়।

২০২০ সালের মধ্যেই মূল রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে চলে আসবে বলে প্রকল্প সূত্র নিশ্চিত করেছেন। দুটি ইউনিটে (১২০০+১২০০) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিটে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালিত হবে বলে প্রকল্প সুত্র জানিয়েছেন।পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের কারণে এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের নির্মিত প্রযুক্তির অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ সেফটি সিস্টেমের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই বলে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানিয়েছেন। এরপরও যদি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেও যায়, সে ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থ জনগণের নাগালের মধ্যে যাবে না। কারণ কোর ক্যাচার ব্যবহার করায় তেজস্ক্রিয় বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই তিনি জানান। যে কারণে এই মডেলটি ঝুঁকি মুক্তই বলে তিনি জানিয়েছেন।

মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক আবাসন পল্লী ‘গ্রিনসিটি’।পাবনা গণপূর্ত অধিতদফতর এগুলো বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা বিশিষ্ট ১১টি বিল্ডিং এবং ১৬ তলার ৮টি বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। ২২টি সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরি হবে এই চত্বরে। গ্রিণসিটিতে থাকবে মাল্টিপারপাস হল, চিকিৎসা কেন্দ্র, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ব্যয়ের প্রকল্প রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে । এলাকার জনপ্রতিনিধি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশিষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধুর জামাতা প্র্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিঞা রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন্। এরই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল এই প্রকল্প অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে গ্রহন করেন।