ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাসহ নানা কাজে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজধানীর গুলশান এলাকাসহ আশপাশের সব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা মাটির নিচে নেয়া হচ্ছে।দেশের ১৬ জেলায় ১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পাসপোর্ট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই অফিসগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।পরে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।তিনি বলেন, গুলশানে ১৩২/৩৩/২২ কেভি ভূ-গর্ভস্থ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পটির আওতায় গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সরবরাহ লাইনের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এজন্য মাটির নিচে স্থাপন করা হচ্ছে ১৩২/৩৩ কেভি ও ৩৩/১১ কেভি গ্রিডের ইনডোর টাইপ উপকেন্দ্র। টানেল নির্মাণ করে বিদ্যুতের ক্যাবল সরিয়ে নিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ সাব-স্টেশনের সংযোগও স্থাপিত হবে মাটির নিচেই।
চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫০ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো-ঢাকার গুলশানে ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা নির্ভরযোগ্য বৃদ্ধি এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রাখা। ফলে যেখানে-সেখানে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি থাকবে না। উন্নত দেশের মতো সমস্ত বিদ্যুৎ কার্যক্রম যাবে মাটির নিচে বলে জানান তিনি।এটিসহ একনেক সভায় মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছেÑএ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।মন্ত্রী বলেন, পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প (১ ফেইজ) বাস্তবায়নে দুই দফায় তিন বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এবং গণপূর্ত অধিদফতর।’ তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পটিসহ একনেকে মোট ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেকে উপস্থাপিত ৮টি (নতুন ও সংশোধিত)) প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৩ হাজার ২৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৩ হাজার ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্প ছাড়াও একনেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এটি নির্মিত হলে পোশাক শিল্পের জন্য তিন স্তরের জিএসপি সুবিধা আদায় করার জন্য পরিবেশবান্ধব সংমিশ্রিত সুতা ও কাপড় উৎপাদন করা যাবে। তিনি আরও জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ‘কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সাইক্লোট্রন ও পেট-সিটি এবং ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিক্যাল ফিজিক্স (আইএনএমপি),সাভারে সাইক্লোট্রন সুবিধাদি স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক।এছাড়া,একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্যন্য প্রকল্পগুলো হলোÑস্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১)’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিভাগের ঢাকাস্থ গুলশানে ১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূ-গর্ভস্থ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিভাগের ‘মোল্লাহাট ১০০ মে. ও. সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন’ প্রকল্প।সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘সোনাইমুড়ী-সেনবাগ-কল্যানদী-চন্দেরহাট-বসুরহাট সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প।