২০১৭ সালকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এছাড়া এ বছরের প্রথম ছয় মাসে আলোচনা ছিল ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট ও ব্যাংক ঋণের সুদহার নিয়ে। তারল্য তথা নগদ টাকার সংকটে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। অন্যদিকে এ সময়ে খেলাপি ঋণও বেড়েছে অনেক। ডলার সংকটেও পড়ে অনেক ব্যাংক। এত কিছুর পরও এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।তবে ব্যাংকগুলো সংবাদমাধ্যমকে মুনাফার যে তথ্য সরবরাহ করে সেটার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তীতে মিল পাওয়া যায় না।

ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক হিসাব ও প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে। এরপর রয়েছে অন্যান্য বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে বলে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত করেছে। নতুন ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেড।ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রাথমিক হিসাব। পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হবে।জানা গেছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ এক হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৮৮১ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৫৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সমপরিমাণ পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৪৫৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৩০ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩২৫ কোটি টাকা; গত বছর ছিল ৩২০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩২৫ কোটি টাকা; গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩২৪ কোটি টাকা।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের বেশি সুদের কারণেই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। আর সুদহার বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সুদ গুনতে গিয়ে শিল্পোদ্যোক্তারা হিমশিম খেয়েছেন। এতে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম সুদে আমানত সংগ্রহ করলেও বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত সুদ আদায় করার কারণেই মুনাফা বেড়েছে। তবে ঋণের সুদহার কমলে বছর শেষে অধিকাংশ ব্যাংকই মুনাফার পরিবর্তে লোকসান করবে।গত বছরের তুলনায় ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১১০ কোটি টাকা। এ বছর ব্যাংকটি ৪১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। জুন শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক ৩২৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩০২ কোটি টাকা।সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৫৫ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৬৭ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮৬ কোটি টাকা।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা; গত বছর ছিল ২৯৩ কোটি টাকা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২২৯ কোটি টাকা; গত বছর ছিল ১৮০ কোটি টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা; গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৩ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা; গত বছর ছিল ৭৩ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। গত বছর ছির ৭২ কোটি টাকা।