ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক; এটি মৃত্যু ঘটায়। এই বাক্যগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর গুরুত্ব কি আসলেই অনুধাবন করতে পারি? মনে হয় না। কেননা, গত এক দশক ধরে আইন প্রয়োগ করেও বাংলাদেশে ধূমপান বন্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক; এটি মৃত্যু ঘটায়। এই বাক্যগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর গুরুত্ব কি আসলেই অনুধাবন করতে পারি? মনে হয় না। কেননা, গত এক দশক ধরে আইন প্রয়োগ করেও বাংলাদেশে ধূমপান বন্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। খুব সহজেই অনুমেয়, ধূমপানের মতো সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে শুধু আইন প্রয়োগ নয় চাই সামাজিক সচেতনতাও।
আগে হয়তো ছিল না, কিন্তু ২০০৫ সালের পর বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে যেমন আইন আছে, তেমনি আছে ২০১৩ সালে পাস হওয়া সংশোধিত বিধিমালা। এরপরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেই। আইনে শিশুসহ অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে রক্ষায় কঠোর বিধান থাকলেও তা কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আইনে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তামাক সেবনের ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে ২১ মে ২০০৩ সালে ১৬৮টি সদস্য রাষ্ট্র একটি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করে, যা ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই কনভেশনের স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ পাশ করে। এ আইনের ৪(১) ধারার বিধান অনুযায়ী, ‘কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক পরিবহন বা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করিতে পারিবেন না’। পাবলিক প্লেস বলতে এখানে মূলত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পার্কসহ জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহারের জায়গাকে বোঝানো হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ধূমপানকে নিয়ন্ত্রণে আইনের ৭ ধারায় পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এখানে আইনের স্পিরিট শুধুমাত্র উন্মুক্ত ও পরোক্ষ ধূমপান বন্ধই নয়, বরং সবাইকে বোঝানো যে ধূমপান খারাপ কাজ, যা লুকিয়ে করতে হয়। এ আইনের অধীন সম্ভাব্য অপরাধের ধরন ও অপরাধীর দ্রুত এবং জনসম্মুখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য আইনটিকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর কার্যকরি প্রয়োগ ও তামাক সেবনে স্বাস্থ্যক্ষতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’ গঠিত হয়। এ সেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করে থাকে।
২০১৫ সালে এ আইনের ১৬ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিধিমালার ৮(ক) বিধি অনুসারে প্রতিটি পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ‘ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ এই সতর্কতামূলক নোটিশটি দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ বিষয়টি নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাএকরা যেতে পারে। আর এ বিধান লংঘিত হলে আইনের নির্দেশনা অনুসারে আদালত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। পাবলিক প্লেসে বা জনসম্মুখে বেপরোয়া ধূমপায়ীরা ২০১৩ সালের তামাক আইনের সংশোধনীতে উল্লেখ আছে, অফিস আদালত ছাড়াও পাবলিক প্লেস হিসেবে পাবলিক টান্সপোর্ট, টার্মিনাল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর এবং বাসস্ট্যান্ডের মতো স্থানে ধূমপান করা যাবে না। আইন অনুযায়ী ওই সব স্থানে ধূমপায়ীকে অনধিক ৩০০ টাকা জরিমানা করতে হবে। কিন্তু নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মনে হলো জরিমানা তো দূরে থাক, এখানে ধূমপান করাটা যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসচালক থেকে শুরু করে, হেলপার, যাত্রী সবাই যেন শামিল হয়েছে ধূমপানের মিছিলে। এতে নারী ও শিশুসহ অসুস্থ কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা দেখার সময় নেই কারো।