চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মে পর্যন্ত প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণ ও অনুদান মিলে রেকর্ড ৪৬৯ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে।বৈদেশিক সহায়তার এ ছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭২ ভাগ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছিল। অর্থাৎ এই সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি ছাড় হয়েছে।

তবে বিদেশি অর্থ ছাড় এখনও লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকে ৬৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দাতাদের থেকে সহায়তার প্রতিশ্র“তি আদায়েও সফলতা এসেছে। মে মাস নাগাদ প্রতিশ্র“তি এসেছে এক হাজার ২৭ কোটি ডলারের, যেখানে পুরো অর্থবছরে প্রতিশ্র“তি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ কোটি ডলার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন বলেন, “মূলত এবার জাপানের অর্থায়নে চলমান মেট্রোরেল এবং রাশিয়ার অর্থায়নে চলমান রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে গতি বাড়ায় বিদেশি অর্থ ছাড় বৃদ্ধি পেয়েছে।

“আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি।” প্রতিশ্র“তি আদায়ে সফলতার পেছনেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। অতিরিক্ত সচিব বলেন, “প্রকল্প সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প বেশি আসছে। সেসব প্রকল্পের জন্য দাতাদের অর্থায়ন প্রতিশ্র“তিও বাড়ছে।” অর্থবছরের শেষ মাসে বিদেশি অর্থ ছাড় ‘বৃদ্ধি পায়’ বলে পুরো অর্থবছরে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ছাড় হওয়া বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে ঋণ হিসেবে পাওয়া গেছে ৪৩৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঋণ ছাড় হয়েছিল ২৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আর অনুদান ছাড় হয়েছিল ৩২ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কারণে প্রতিশ্র“তির আকার অনেক বেশি ছিল। এবারও জাইকা, বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও চীনের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রকল্পে বড় অংকের অর্থ সহায়তার প্রতিশ্র“তি পাওয়া গেছে ।

এবার ঋণ প্রতিশ্র“তি পাওয়া গেছে ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অনুদানের প্রতিশ্র“তি মিলেছে ৫০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট প্রতিশ্র“তি পাওয়া গিয়েছিল ১ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। তার মধ্যে ঋণের প্রতিশ্র“তি ছিল ১ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার ছিল অনুদানের প্রতিশ্র“তি।

এদিকে সরকার চলতি অর্থবছরে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ বিভিন্ন দাতাকে মোট ১৩১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ বাবদ ২৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং আসল পরিশোধ হয়েছে ১০৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। দাতা সংস্থাটি ছাড় করেছে ১৩২ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক ১০৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার এবং এডিবি ছাড় করেছে ৭৭ কোটি ২১ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে একসঙ্গে কিছু প্রতিশ্র“তি পাওয়ায় এবারও বড় আকারের প্রতিশ্র“তি আদায় সম্ভব হয়েছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্র“তি দিয়েছে জাইকা। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।”