মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মুন্সীগঞ্জ জেলার সাবেক এই সাধারণ সম্পাদককে হত্যা করার জন্য তিন মাসে আগে পরিকল্পনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বাচ্চু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুর রহমান ২৪ জুন গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পুলিশকে জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম নিহত আবদুর রহমানের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নিহত আবদুর রহমান জানিয়েছে, জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করা হয়। তিনি নিজেই শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করেন। হত্যাকা-ের সময় ৪ জন উপস্থিত থাকলেও নেপথ্যে ছিল আরও দুই জন। বাচ্চুকে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন মাস আগে গাড়ি চালক পরিচয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের বালুরচর ইউপির খাসমহল কালীনগর গ্রামে প্রবাসী ইয়াকুব আলীর বাসা ভাড়া নিয়ে শাহজাহান বাচ্চু হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, গত ২৪ জুন পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা টিম, কাউন্টার টেররিজমের ইউনিট, মুন্সীগঞ্জ ও বগুড়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের কেওয়া পশ্চিমখ- গ্রামের একটি দ্বিতল ভবনের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক করা হয় আবদুর রহমান ওরফে লালু, সাঈদ, আক্কাস ও কাওসার নামের ৪ জঙ্গি সদস্যকে। নিহত আবদুর রহমান ওরফে লালু পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকাইয়াপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে। তিনি জেএমবি’র ঢাকা বিভাগের সামরিক শাখার কমান্ডার। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত ও অপর আসামিদের গ্রেফতারের স্বার্থে সেসব তথ্য গোপন রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, জঙ্গি আবদুর রহমানের তথ্য মতেই বুধবার রাত ২টার দিকে কালীনগর গ্রামে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় তল্লাশী করে আলমারির ড্রয়ারের নিচ থেকে একটি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গুলি ও রান্নাঘর থেকে ৪টি তাজা হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে ফেরার পথে মোটর সাইকেল দিয়ে সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন আবদুর রহমান। তাকে উদ্ধার করে সিরাজদীখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সময় আহত পুলিশের এএসআই বেলালউদ্দিন, এএসআই হাসান সাঞ্জালী ও কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ৯ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। নিহত আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ ৩টি ডাকাতির মামলা রয়েছে।