২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে। এখন চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ শোলাকিয়া মাঠে এটি হবে ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাত। প্রতিবছরের মতো এবারও জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ।নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরো নিশ্চিদ্র করতে এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে ড্রোন। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য তিনটি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ায় মাঠে। এর দ্বারা ঈদগাহ ও এর আশপাশের এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ।
পুলিশ সুপার জানান, মুসুল্লীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুরো ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকাকে দশটি সেক্টরে ভাগ করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, সহ¯্রাধিক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।এ ছাড়া মাঠের প্রবেশ পথগুলোসহ আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায় এবং ২৪টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদগাহ অভিমুখি সকল সড়কে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসুল্লিদের ঢুকতে হবে বলেও জানান মো. মাশকুরুর রহমান খালেদ। এর আগে আরো অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসুল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে আগত মুসুল্লিদের কেবল পাতলা জায়নামাজ ছাড়া ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত মুসুল্লিদের কাছে নির্বিঘœ করতে জেলা প্রশাসন, ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও পৌরসভাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। মুসল্লিদের চলাফেরা নির্বিঘœ করতে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্মাণ করেছে কয়েকটি নতুন রাস্তা ও একটি সেতু। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিকেল টিম।দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রেন সকাল পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬ টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। নামাজ শেষে ট্রেন দুটি দুপুর ১২ টায় ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. কামরুজ্জামান।সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়রা।ইতিহাস বলছে, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করে বলে মাঠের নাম ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের ‘শোলাকিয়া’ মাঠে। বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে পাঁচ শতাধিক মুসুল্লি নামাযে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। সেই সাথে মাঠের বাইরে আশে পাশের বিরাট এলাকা জুড়ে ঈদের জামাতে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা মিলিয়ে জামাতে অংশগ্রহনকারী মুসুল্লির সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।২০১৬ সালের ৭ জুলাই ইদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও বাড়ীর ভিতরে থাকা এক গৃহবধুসহ চারজন নিহত হয় এবং আট পুলিশসহ তিন পথচারী গুরুতর আহত হয়।