কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মনির আহম্মেদ ভুইয়ার বাম হাত কব্জি বরাবর কেটে নেয়া এবং অপর হাতের দুইটি আঙ্গুল সম্পুর্ণ কেটে বেধড়ক কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলার ওয়ান্টেড আসামিরা এখন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারা তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নিত্যদিনের কর্মকান্ড সব চালাচ্ছে প্রকাশ্যে। আর আওয়ামী পরিবারের এই নেতা কোনমতে জীবনে বেচে রয়েছেন ; তাও সক্ষমতাহীন প্রতিবন্ধীর মতো। মনির ভুইয়া এখন হতাশাগ্রস্ত। সরকারি দলের এ নেতা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

কারন তার দলীয় সরকার ক্ষমতায় অথচ তাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্য দিনের বেলা কুপিয়ে অর্ধমৃত করা হয়েছে। কেটে নেয়া হয়েছে হাত। বহু অর্থকড়ি খরচ করে চিকিৎসায় কোনমতে বেচে এখনও দলের কাজ করে যাচ্ছেন। বিচারের আশায় ধর্ণা দিচ্ছেন। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল বিকেল তিনটার ঘটনা। পটুয়াখালী দুদক অফিসের সামনের সড়কে তাকে হত্যা চেষ্টায় সশস্ত্র হামলা-তান্ডব চালায় সন্ত্রাসীচক্র। একই বছরের ৩ আগস্ট পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন। মনির ভুইয়ার অভিযোগ, নানা কল্পকাহিনী করা হয় এ মামলার তদন্ত নিয়ে। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক মতিনুর রহমান পাঁচ বছর পরে ২০১৭ সালের ২৯ নবেম্বর বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যেখানে আসামি আইয়ুব আলী শিকদার, মোশারফ মোল্লা, ফোরকান মোল্লাসহ ১০জনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে সভাপতির পদ নিয়ে এবং জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতার উদ্রেক ঘটে। বিজ্ঞ আদালত অধিকাংশ আসামিদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আছেন। কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মোশারেফ ও ফোরকান মোল্লা। তারা উল্টো পরোক্ষভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে মনির ভুইয়ার অভিযোগ। মনির ভুইয়া জানান, তিনি বর্তমানে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও চরম নিরাপত্তাহীন রয়েছেন। খোদ মহিপুর থানার অপরদিকে আলীপুর বন্দরে এসব আসামিরা ফ্রি-স্টাইলে ঘোরাফেরাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। ফলে অনিরাপদ হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মনির ভুইয়া। এভাবে মহিপুর পুলিশি থানার অধীনে অন্তত অর্ধশত ওয়ান্টেডসহ বিভিন্ন সময় মাদকসহ সন্ত্রাসী হামলার আসামিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের নখদর্পনে থাকলেও এরা অদৃশ্য শক্তির কারণে এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। আলীপুর বন্দরের আলোচিত তরুণ হাইব্রিড সন্ত্রাসী সোহেল খাঁ। হঠাৎ করে বছর দুই আগে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চেপেছে এই বখাটে সন্ত্রাসী। এর হাতে মারধর ও লঞ্ছিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ একাধিক নেতাসহ বহু কর্মী। এ ক্যাডার আবার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদকের ব্যবসাসহ সশস্ত্র মহড়ার এন্তার অভিযোগ এ হাইব্রিড ক্যাডারের বিরুদ্ধে। একাধিক মামলার আসামি এ সোহেল খাঁ এখনও প্রকাশ্যে। একসময় মাদ্রাসায় কয়েক ক্লাশ পড়ার পরে হঠাৎ করে দুই বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের স্বঘোষিত ক্যাডার বনে গেছে। সোহেল বাহিনীর সন্ত্রাসে ব্যক্তি কেন্দ্রীক গ্রুপিংএর শিকার হয়ে অনেক পোড়খাওয়া দুর্দিনের ত্যাগী নেতারা এখন ঘর মেরেছে। দলের কর্মকান্ডে প্রকাশ্যে যায়না। অভিমানে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। মোয়াজ্জেমপুর ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একেএম আবু বকর ছিদ্দিক জানান, তার মাদ্রাসার ছাত্রীরা বখাটে মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের আঃ রব মোল্লার ছেলে রাকিবুল ইসলাম ও তার তিন সহযোগী মনোহরপুর গ্রামের মোঃ জামালের ছেলে মোঃ সোহেল, মোঃ ছালেকের ছেলে মোঃ সুমন, কুদ্দুস হাওলাদারের ছেলে মোঃ শাহীনের উত্যক্তের কারনে লেখাপড়া করতে পারছেনা। দুই অভিভাবক মাদ্রাসায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এসব ইভটিজারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এপ্রিল মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যা মহিপুর থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আজ অবধি কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান এব্যাপারে আইনগত প্রতিকার না পেলে ২০১৮-২০১৯ সেশনে আলিম শ্রেণিতে কোন ছাত্রী ভর্তি হবেনা। এমন শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবক পর্যন্ত। অভিভাবক শিক্ষকরা যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ দেয় এ বখাটেচক্রের বিরুদ্ধে। বর্তমানে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকাসহ পুলিশি থানা মহিপুরের অধীন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ছিচকে মাদক সরবরাহকারীসহ সেবনকারী অন্তত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি দলের যারা গডফাদার ও শেল্টারদাতারা কেউ ধরা পড়েনি। এনিয়েও এলাকায় মুখরোচক জনশ্র“তি রয়েছে। শুধু কুয়াকাটা নয়, কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীর লোন্দা এলাকায় অসংখ্য মামলার আসামি মোস্ট ওয়ান্টেড পলাশ মোড়ল বাহিনীর ১৫/১৬ ক্যাডার এখনও রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। প্রকাশ্যে এ চক্র মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি প্রকাশ্যে দিনের বেলা এচক্রের অস্ত্রাঘাতে গুরুতর জখম দিনমজুর জলিল হাওলাদার (৫০) এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। তাকে এখনও এক ধরনের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে লোন্দা গ্রামের বাড়িতে। বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছে। লোন্দার নিশানবাড়িয়া গড়াৎ খাঁ গ্রামের শতাধিক কৃষকসহ সাধারণ মানুষ এক লিখিত অভিযোগে জানান, গ্রামের বাচ্চু গাজী, হাসান গাজী, ফারুক গাজী এখন তাদের কাছে এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মাদকের ব্যবসা, জমিজমা দখলসহ এন্তার অভিযোগ করেছেন গ্রামের মানুষ। রহস্যময় আয়ে এরা এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে বলে সকলের মন্তব্য। এরা আবার এখন ঈদকে সামনে রেখে চাদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার পথ বেচে নিচ্ছে। কলাপাড়া পৌরশহরের কুয়াকাটাগামী শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়কে পর্যটকবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থামিয়ে দিনেরাত ২৪ ঘন্টা ফ্রি-স্টাইলে চাদাবাজী চলছে। এসব বন্ধে বহুবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি। এভাবে কলাপাড়ায় অন্তত অর্ধশত ওয়ান্টেড আসামি এখন প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাগরপারের এই জনপদ। মানুষ এসব কারণে পুলিশের বিশেষ অভিযান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেন। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ মাদক কারবারিসহ সেবনকারী সকলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মহিপুর থানার ওসি মোঃ মিজানুর রহমান জানান, অধিকাংশ ওয়ন্টেডরা পলাতক রয়েছে। তারপরও বিশেষ অভিযানে অনেককে আটক করা হয়েছে। তারা এদেরকে গ্রেফতরে সচেষ্ট রয়েছেন।