ভোটের হিসাব নিকেশে রাজনীতিবিদরা গরীব ও উচ্চবিত্তদের যেভাবে মূল্যায়ন করেÑ উচ্চ কণ্ঠ না থাকার কারণে বিকাশমান মধ্যবিত্তকে সেভাবে গুরুত্ব দেন- এর প্রতিফলনই হয়েছে এবারের বাজেটে।২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে প্রত্যাশা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ ( সিপিডি)।শুক্রবার রাজধানীর গুলশান২ লেকশোর হোটেলে সিপিডি আয়োজিত (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেভাবে বাড়ছে বৈষম্য সেদিকে নজর নেই সরকারের-এ বাজেটের প্রভাব পড়বে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের উপর।প্রস্তাবিত বাজেটকে নতুন বাংলাদেশের পুরনো বাজেট বলে অভিহিত করেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ বাজেট মধ্যবিত্তের উপর চাপ কমাতে পারবে না। শিক্ষাতে মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসম্ভব। সমষ্টি অর্থনীতিতে এ বাজেট কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাজেট পর্যালোচনা করে দেখেছি, এই বাজেটের ফলে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা সরকার এই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনসন্তুষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘বাজেট পরিকল্পনা’ও জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একইসঙ্গে বাজেটের অর্থ খরচের পর এর একটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। অর্থ যথাযথ প্রক্রিয়ায় খরচ হলো কি-না সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ব্যক্তি করের আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। তবে সিপিডি বাজেট পর্যালোচনায় বলেছে, এই করের আয়সীমা ৩ লাখ টাকা হওয়া প্রয়োজন। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে চলছে। পদ্মা সেতুসহ বড় প্রকল্পগুলোর গতি কম। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। তা না হলে সরকারের ব্যয় বাড়বে। জটিলতা তৈরি হবে।এটা নির্বাচনী বাজেট কি? প্রশ্নে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার ৫ বছরের জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্রতি দেয়। আর বাজেট হয় এক বছরের জন্য। সে কারণে এক বছরে সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। বাজেট প্রণয়নের সময় সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মাথায় রাখে। আর সেটাই স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।বাজেটে কোন শ্রেণীর মানুষ বেশি লাভবান হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট পর্যালোচনায় দেখেছি, এতে সামগ্রিকভাবে গরিব ও উচ্চবিত্তকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে। মধ্যবিত্তদের মূল্যায়ন কম হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কণ্ঠস্বর না থাকায় বিকাশমান অর্থনীতিতে তাদের মূল্যায়ন কম হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।