তালেবানের সঙ্গে সাময়িক ও নিঃশর্ত অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। রমজান মাসের শেষ এবং ঈদের কথা মাথায় রেখে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ জুন) আশরাফ ঘানি জানান, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত এ অস্ত্রবিরতি কার্যকর থাকবে, তবে আইএসসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, তালেবানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আফগান সরকারের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
কাবুলে তালেবান হামলা নিয়ে ফতোয়াদানকারী ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে এ সপ্তাহে আফগান সরকারের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইসলামী চিন্তাবিদরা তালেবানের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানোর সুপারিশ করেছিলেন। আর সে সুপারিশ অনুমোদন করে বৃহস্পতিবার অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার পর একটি টুইট করেন আশরাফ ঘানি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘এ অস্ত্রবিরতি তালেবানের উপলব্ধির জন্য একটি সুযোগ। তাদের উপলব্ধি করতে হবে যে সহিংস প্রচারণা দিয়ে হৃদয়কে জয় করা যায় না বরং তা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’
তবে আশরাফ ঘানির এ সিদ্ধান্তে কারও কারও দ্বিমত রয়েছে। আফগানিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ আমারখেলের আশঙ্কা, এ অস্ত্রবিরতি তালেবানকে পুনঃসংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেবে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি কোনও ভালো পদক্ষেপ নয়। এর মধ্য দিয়ে শত্রুরা আরও হামলা চালানোর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করার সুযোগ পাবে।’নাইন ইলেভেনের হামলার পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান শেষ হয় ২০১৪ সালে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী এখনও আফগান সেনাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানে এখনও প্রায় ৮,৪০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে।অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে কথা বলতে দেখা গেলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ প্রশ্নে সুর পাল্টেছেন তিনি। গত আগস্টে ট্রাম্প বলেন, তার প্রাথমিক ইচ্ছা ছিল আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু পরে ‘ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার মতো ভুল’ না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তালেবানও কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি রেখেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামলা জোরালো করেছে সশস্ত্র সংগঠনটি।গত ফেব্র“য়ারিতে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তালেবানকে একটি বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন ঘানি। এর মধ্য দিয়ে ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ঘানি বলেছিলেন, ‘শান্তি আলোচনায় আসতে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে হবে এবং তালেবানকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত হতে হবে। আটক তালেবানদের মুক্তির বিষয়টি আফগানিস্তানের সরকার বিবেচনা করছে এবং এ বিষয়ে আফগানিস্তান পাকিস্তানের সঙ্গেও কথা বলেছে।