আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ১৮ জুন হতে দ্বিতীয়বারের মতো এ নির্বাচনের আনুষ্ঠাণিক প্রচার প্রচারণা শুরু করবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে আনুষ্ঠাণিক প্রচার প্রচারণা আরো ১০দিন পর হতে শুরু কথা থাকলেও কোন প্রার্থীই বসে নেই তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা থেকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ ও সভা করছেন। শুক্রবার জুম্মাবার হওয়ায় এদিন প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় ও প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। বিকেলে তারা মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুসল্লীদের সঙ্গে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন এবং মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন। এসময় তারা নানা আশার বাণী শুনিয়ে সমর্থণ আদায়ের চেষ্টা করেছেন এবং ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এদিনটি ব্যস্ত কাটিয়েছেন। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় ক্রমেই নিস্তবদ্ধতা কাটিয়ে সরব উঠছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামীলীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে বর্তমান ও সাবেক একাধিক মন্ত্রী এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা গাজীপুরের নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের প্রার্থীর জন্য দোয়া ও ভোট চাচ্ছেন।

এদিন পৃথক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত গ্রীন সিটি এবং ক্লিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে সকলের দোয়া ও সহযোগীতা চেয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। অপর দিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নগরীতে সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশায় জনগণের দূর্ভোগের জন্য আওয়ামীলীগকেই দায়ী করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থীকে ভোট না চেয়ে নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

শুক্রবার জুম্মাবার হওয়ায় নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠাণে যোগ দিয়ে এবং ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। এদিন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সিটি কর্পোরেশনের পৃথক দু’টিস্থানে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় আয়োজিত আলোচনা সভা এবং দোয়া ও ইফতার মাহফিলে যোগদেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বিকেলে মহানগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দনা ঈদগাহ মাঠে বাসন সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম বাবুল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠাণে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমও যোগ দেন।

সভায় মন্ত্রী বলেন, সরকার গাজীপুরের উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যহত রাখতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। এসময় তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
এসময় গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকসেদ আলম, সিরাজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেকসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পুবাইল কলেজ মাঠে আয়োজিত আলোচনাসভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মার্কা নৌকা। বাংলাদেশে নৌকা মার্কা যখনই ক্ষমতায় থাকে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। তিনি গাজীপুরে উন্নয়নের জন্য আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

এদিকে এদিন সকালে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে ছয়দানাস্থিত তার বাসায় বৈঠক করেন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। তিনি দুপুরে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়দানা বায়তুর জান্নাত সিদ্দিকিয়া জামে মসজিদে জুমা’র নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়াও বিকেলে তিনি চান্দনা ঈদগাহ মাঠ এবং জাঝর গ্রামীণফোন ভবনের পূর্বপাশে ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড পুবাইল কলেজ মাঠে আয়োজিত পৃথক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। এসময় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত গ্রীন সিটি এবং ক্লিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে সকলের দোয়া, সহযোগীতা ও সমর্থন চান।

অপরদিকে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার শুক্রবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী মরকুন গোরস্থান (টঙ্গী পৌর গোরস্থান) জামে মসজিদে জুমা’র জামায আদায় করেন। জুমার নামাজের আগে তিনি এলাকার মৃত ব্যক্তিদের নাম স্মরণ করেন এবং সকল কবরবাসীর জন্য মুসল্লীদের কাছে দোয়া চান। এসময় তিনি উপস্থিত মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং ভোট প্রার্থনা করেন। বিকেলে তিনি টঙ্গীর আউচপাড়া সুরতরঙ্গ রোডে টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী নূর বকস্ পরিবারের আমন্ত্রণে ইফতার মাহফিলে শরিক হন।
এর আগে সকালে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর নিজ বাস ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি অতি বৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে গাজীপুর নগরবাসীর দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এই দুর্ভোগের জন্য কারা দায়ী নগরবাসী তা ভাল করেই অবগত আছেন। বর্তমান মেয়র এম.এ মান্নানকে কাজ করার সুযোগ দিলে আজকে গাজীপুরবাসীর এই দুর্ভোগ থাকতো না। মেয়র মান্নান সর্বশেষ প্রায় পৌনে চারশ’ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু পারসেন্টেজ লাভ ও টেন্ডারবাজি করার সুযোগ না পেয়ে মেয়র মান্নানকে সেই কাজ করতে দেয়া হয়নি। হাসান সরকার অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করে ঐ টেন্ডার স্থগিত করিয়েছিলেন; যা আজ কারোরই অজানা নয়। তাই টেন্ডার বন্ধ করে নগরবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টির অপরাধে আওয়মীলীগের মেয়র প্রার্থীকে ভোট না চেয়ে নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত মিনার প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমান সন্ধ্যায় নগরীর ৫১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত জামিয়াতুস সুন্নাহ সাতাইশ আয়োজিত ইফতার ও দুআ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে ইফতার মাহফিলে শরিক হন। এর আগে তিনি স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও এলাকাবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেন। জামিয়াতুস সুন্নাহ সাতাইশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মুখলেছুর রহমান,মুফতি আব্দুল হালিম, মুফতি মুহসিনুদ্দীন কাসেমী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ৬জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১।