রাশিয়া বিশ্বকাপে যে জার্সি পরে ইংল্যান্ড দল খেলবে, সেই জার্সি তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু ইংলিশদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে দামি জার্সি বানিয়েও ‘বঞ্চিত’ হচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এমন দাবি করে প্রতিবেদন ছেপেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফ ও ডেইলি মিরর। বিশ্বকাপের প্রতিটি জার্সি ইংল্যান্ডে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ পাউন্ডে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ১৮ হাজার টাকা (১৭,৯০৯টাকা) । অথচ এই দামের জার্সি যারা তৈরি করছেন তারা পাচ্ছেন নামমাত্র মজুরি। প্রতি ঘণ্টায় এই জার্সি তৈরির শ্রমিকরা পান মাত্র ২৩ টাকা।
ইংল্যান্ড দলের অফিসিয়াল স্পন্সর নাইকি। তারাই দলটির বিশ্বকাপ জার্সি সরবরাহ করবে। এবছর হ্যারি কেন ও রাহিম স্টার্লিংরা যে জার্সি পরে খেলবেন, তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে দামি জার্সি হবে সেটি। অথচ এ জার্সি তৈরি করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ২০০ টাকার কম (১৮৮ টাকা, ১.৬৮ পাউন্ড)। এমন দাবি ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘জোনে’ কাজ করেন এসব শ্রমিক। প্রমাণ হিসাবে তারা ঢাকার নিকটবর্তী এলাকা সাভারের কথা উল্লেখ করেছে। যেখানে শ্রমিকরা সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। ২০১৬ সালে নাইকির সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডে ১২ বছরের জন্য চুক্তি করে ব্রিটিশ ফুটবল অ্যাসেসিয়েশন (এফএ)।
ডিজিটাল, সংস্কৃতি, মিডিয়া, স্পোর্টস কমিটির সদস্য এবং লেবার পার্টির এমপি জো স্টিভেনস নামমাত্র মজুরির বিষয়ে একটি তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের সঙ্গে যুক্ত ইংল্যান্ডের যেকোনো বিষয়ে, এমনকি জার্সিসহ সবদিক বিবেচনা করা এফএ’র দায়িত্ব। যার জন্য আমাদের দেশের গর্ব হওয়া উচিত। কিন্তু এ ব্যাপারে খুব কমই গর্ব করা যাবে, যদি এটা প্রমাণিত হয় যে মানুষের শোষণের উপর দিয়ে তা তৈরি করা হচ্ছে।’
ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা অবশ্য ইংল্যান্ডের আইন অনুযায়ী সবকিছু প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্য ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইন নামের একটি সংগঠন বলছে, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। এমনকি তাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ হয় না। তারা পরিবার নিয়ে ঠিকঠাকভাবে চলতেও সক্ষম না। সমর্থকদের টাকায় নাইকি সর্বোচ্চ মুনাফা করছে, অথচ শ্রমিকরা অনাহারে মরছে। নাইকির এই শোষণের ব্যবসায়ী মডেল পরিবর্তন করতে সমর্থকদের সুর তোলা উচিত।’
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা মাসে নূন্যতম ৫২৬০ টাকা মজুরি পায় বলে উল্লেখ করেছে মিরর।