কুমিল্লার দুই মামলায় বিএনপিচেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রেখে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। ২৪ জুন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিনও ধার্য করেছেন আদালত। সে কারণে আইনজীবীরা মনে করছেন, ঈদুল ফিতরের আগে মুক্তি মিলছে না বিএনপি প্রধানের।বৃহস্পতিবার (৩১ মে) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ খালেদার জামিন স্থগিত রেখে নিয়মিত আপিলের এ আদেশ দেন।
সোমবার (২৮ মে) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। নড়াইলের আরেকটি মামলা উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন আদালত।বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের পৃথক দুটি অভিযোগে ঢাকায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলা দুটির বিষয়ে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার (৩১ মে) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন। তাদের সঙ্গে ছিলেনÑ ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা প্রমুখ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে আরও ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ হোসেন, এএম আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে গত ২২ মে ওই দুই মামলায় জামিন চেয়ে আদালতে অনুমতি চান খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সেই আবেদন দুটি গত ২৯ মে শুনানি হয়। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন অন্য মামলার শুনানিতে থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) তার শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন আদালত।এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন। পাশাপাশি মামলা দুটিতে খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালতের আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলেন হাইকোর্ট। মামলা দুটি বর্তমানে বিচারিক আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলা দুটি হলোÑমানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগআদালত সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালত-৭ এ মানহানির মামলা করেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। এ মামলায় ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। এরপর গত ১২ এপ্রিল আইনজীবীরা এ মামলায় তার জামিন চান। এরপর গত ১৭ মে আদালত তৃতীয় দফায় সময় পিছিয়ে আদেশের জন্য আগামী ৫ জুলাই আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ অবস্থায় তার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২২ এ মামলাটি করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর গত ২৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিন চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু জামিন না দিয়ে ১৭ মে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত। পরবর্তীতে ওই তারিখে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দিয়ে আগামী ৫ জুলাই জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত। এ অবস্থায় তার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।