এবারের ঈদে ৫ কোটি যাত্রীর ১৫ কোটি ট্রিপ সামাল দিতে সড়ক, রেল ও নৌ-পথ প্রস্তুত নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বুধবার (৩০ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা জানানো হয়। আসন্ন ঈদে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে ‘ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মোজাম্মেল হক বলেন, ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনা,বাসের ট্রিপ-সংখ্যা ঠিক রাখতে বেপরোয়া গতি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদে মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঘরমুখো লাখো যাত্রীকে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের ৪০ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। তাই এবারও পথে দুর্ভোগের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে ঘরমুখী যাত্রীদের। তিনি বলেন, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতর কাজ চলমান থাকায় প্রায় সময় যানজট হচ্ছে।ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশপথ যানজটমুক্ত করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চারলেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ওই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও এ মহাসড়কের সুফল আটকে গেছে কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু ও টোলঘরে ও ফেনী ফতেহপুরের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম। গোলড়া বাসস্ট্যান্ড ও সবজির পাইকারি বাজার, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুড়ি বাসস্ট্যান্ড, উথুলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহন এলোপাতাড়ি রাখায় যানবাহনের জট লেগে যায়। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শেখ জামাল সেতু থেকে কলাপাড়ার পাখীমারা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক অত্যান্ত নাজুক।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়া, শান্তিরহাট, দোহাজারী, কেরানীহাট, চকরিয়া মেইনরোড এলাকায় সরু রাস্তায় তীব্র যানজটের পাশাপাশি চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হলেও সুফল আটকে দিয়েছে অবৈধ পার্কিং ও বাজার। এদিকে, পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন ও পাথর উঠে গেছে। সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার রহবল পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের ২৫ কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ভরা। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রামের জামাদারপুকুর থেকে গাড়ীদহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, ২০ রমজান থেকে পরিবারের অপরাপর সদস্যদের আগেভাগে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। রেশনিং পদ্মতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা। ক্রাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে সড়ক মহাসড়ক প্রতি ইঞ্চি অবৈধ দখল ও পার্কিং মুক্ত করা। সড়কের পাশে হাট-বাজার উচ্ছেদ করা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা।টোলপ্লাজাগুলো সবকটি বুথ চালু করা। যানজট প্রবণ এলাকায় দ্রুত গাড়ি পাসিং এর উদ্যোগ নেওয়া।দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, ফিটনেস বিহীন যানবাহনচলাচল বন্ধ করা, মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেল চালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ঈদ ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্ব পালনের জন্য অমুসলিমদের ঈদ ছুটি বাতিল করা। নৌ-পথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা। রেলপথে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ঈদের আগে ও পরে যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান উকরাম আহমেদ, বিআরটি এর সাবেক চেয়ারম্যান আইউবুর রহমান, দৈনিক সমকালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর অজয় দাসগুপ্ত, ডিটিসিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. সালাহ উদ্দিন আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক হোসাইন আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।