নাটোরের গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী পাখি। ফলে এখন আর পাখির কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গেনা- গ্রামবাংলার ক্ষেত্রেও কথাটি শোনা যায়। গ্রামবাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। দেশীয় পাখিরা গ্রামগঞ্জের ঝাউ-জঙ্গল, বাঁশ-ঝাড়ে বাস করলেও দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠায় এসব পাখিরা তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করছে। বন্য পাণী ও পাখী রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নেওয়া হয়েছে না না উদ্যোগ। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই এনসব ঝাউ-জঙ্গল কেটে ফেলছে। ফলে হারিয়ে ফেলছে তাদের চিরাচরিত বাসস্থান।
বাশিলা গ্রামের কৃষক মো শাহজাহান মোল্লা ও বিআরডিবি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান,কিছুদিন আগেও আমাদের ছোট বেলায় মাঠ-ঘাট, ক্ষেতে-খামারে বিচিত্র ধরণের পাখিদের বিচরণ ছিল। পাখিরা সেসময় ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পাখিরা তৃষ্ণা মেটাতো আর খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকতো। ফসলের মাঠে পাখি বসার দৃশ্য সচরাচর দেখা গেলেও এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে।অতীতে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, কোকিল, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত। এখন আর এসব পাখী গুলো দেখা যায় না। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক।
সেচ্ছা-সেবি সংস্থা গ্রীণ হাউজ সভাপতি মো রেজাউল করিম ও সবুজ বাংলার নির্বাহী পরিচালক ফজলের রাব্বী ও বিলহালতি জীববৈচিত্র্য ফেডারেশন উপদেষ্ট্যা প্রবাসী সেনা সদস্য আব্দুল মতিন মল্লিক জানান, গ্রামবাংলার অতি পরিচিত যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলতো, ভোর হলেই পাখির ডাকে ঘুম ভাংতো। বর্তমান প্রজম্ম চেনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনা কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস। পাখি কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই দায়ী। কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরাও দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া পাখি শিকারীদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই। কখনও কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়ে পাখির বাসা ভেঙ্গে পাখর ছানার মৃত্যু ঘটে ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাখির বিলুপ্তি ঘটায় যেমনি জীববৈচিত্রের সংকট বাড়ছে, তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই কেবল মানব জাতিই জীবের প্রতি দয়া, সহনশীলতা এবং সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে পাখির স্বাভাবিক বেঁচে থাকা বংশবিস্তারের সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ। নাটোর জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, জেলায় পাখী শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে দু জনের জেল, এক জনকে জরিমানা, অপর দুই জন কে না পেয়ে তাদের বাড়ী থেকে পাখী উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয় এবং তাদের পাখী শিকারের ফাঁদ ধবংশ করা হয়েছে। বন্য প্রানী সংরক্ষণ ও পাখী সুরক্ষার জন্য নাটোর জেলায় জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষে না না উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।