ঈদকে সামনে রেখে দ্বীপজেলা ভোলায় জাল টাকার কারবারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে এ চক্রের সদস্যরা সুকৌশলে ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে। হাট-বাজারে গিয়ে এসব জাল টাকা দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। জাল টাকা কারবারী সিন্ডেকেট চক্র এ কাজে মহিলা ও শিশুদের বেশী ব্যবহার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলায় সারা বছরই কম-বেশি জাল টাকার কারবারীরা সক্রিয় থাকে। তবে ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন পার্বন এবং ধান ও পাট কাটার মৌসুমে টাকা জালিয়াত চক্রের তৎপরতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ সময় জালিয়াত চক্রের সদস্যরা বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারকে টার্গেট করে ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট নিয়ে নেমে পড়ে। তারা পণ্যসামগ্রী বেচা-কেনার নামে এ জাল টাকা সুকৌশলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেয়। সুনিপুণভাবে তৈরি এই জাল টাকা সহজে নকল বলে ধরা যায় না। এ কারণে বিকিকিনির সময় সাধারণ মানুষ এই টাকা নিয়ে সহজেই প্রতারিত হয়। একদিকে জাল টাকার কারণে মানুষ যেমন প্রতারিত হচ্ছে, অন্যদিকে ঘটনাটি পুলিশকে জানাতে গিয়ে উল্টো আইনের মারপ্যাচে তাদেরই ফেঁসে যেতে হয়। ফলে জাল নোট প্রদানকারীকে হাতেনাতে ধরতে না পারলে কেউ মুখ খুলতে চায় না। কেবল হাট-বাজারেই নয়, ব্যাংকেও জাল টাকার নোট ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, টাকা জালিয়াত চক্র এমন সুনিপুণভাবে জাল টাকা তৈরি করছে যে, অনেক সময় ব্যাংকের মেশিনেও জাল টাকা ধরা পড়ছে না।সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরির গোপন কারখানা। ওই কারখানায় ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ছাপানো হয়। সেখানে রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। তাদের সাথে বাংলাদেশী টাকা জালিয়াতি চক্রের রয়েছে যোগাযোগ। চাহিদা অনুযায়ী এই জাল টাকা সীমান্ত পথ গলিয়ে এই চক্রের কাছে পৌঁছে যায়। পরে সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে ভোলা সহ সারাদেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এজন্য জালিয়াত চক্রের রয়েছে বহু মাঠকর্মী। মাঠকর্মীরা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে শহর ও হাট-বাজারে নানা কৌশলে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব মাঠকর্মী টাকা জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমিশন পায়। এদিকে টাকা জালিয়াত চক্রের সঙ্গে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজস থাকে। জালিয়াত চক্রের মাঠকর্মীরা কখনো হাতেনাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হলে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ছাড়িয়ে নেয়াসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে বাধা দেয়। তা ছাড়া মাঝে-মধ্যে এই চক্রের দুই একজন সদস্য পুলিশের হাতে আটক হলেও তারা কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসে আবার টাকা জালিয়াতির কাজে নেমে পড়ে।
ভোলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সম্পাদক অ্যাড. সাহাদাত শাহিন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ভোলায় জাল টাকার কারবারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারনে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কঠোর নজরদারী প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে ভোলা সদর থানার ওসি মোঃ ছগির বলেন, জাল নোটের কারবারীদের ধরতে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে জাল নোট কারবারীদের আটকের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও মার্কেটে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি জানান, জাল নোট কারবারী চক্র আটক হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।