নিজস্ব স্যাটেলাইটের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।তিনি বলেছেন, স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হওয়ার মাধ্যমে আমাদের টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সম্প্রচার কাযর্ক্রমসহ মহাকাশ গবেষণার বিশাল ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। এই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। সোমবার রাজধানীতে ‘শিল্পকলা পদক-২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়ছে, দারিদ্র্যের হার কমছে; উন্নয়নের সূচকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে।বাংলাদেশ আজ মহাকাশে প্রতিনিধিত্ব করছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এই যে অর্জন, এর পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা এবং সে অনুযায়ী বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা। রয়েছে এ দেশের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা ও শ্রম।গত ১১ মে বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ সফলভাবে উৎক্ষেণ করা হয়। সরকার আশা করছে, এই স্যাটেলাইট শিগগিরই পুরোদমে কাজ শুরু করবে এবং বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ এখন যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, তার সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যাবে।শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার ওপর জোর দেন।তিনি বলেন, একটি জাতির তরুণ ও যুবসমাজের মাঝে শৃঙ্খলা, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের চেতনা বিকাশসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য জাগিয়ে তুলতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিশু, কিশোর ও যুবদের ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে দূরে রাখতে তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।তাদের জানাতে হবে, আমাদের এই মাতৃভূমিতে জঙ্গিবাদ বা সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখন্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, সংস্কৃতিমনা ও সৃজনশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখায় এ অনুষ্ঠানে সাতজন গুণী ব্যক্তিকে ২০১৭ সালের শিল্পকলা পদক দেওয়া হয়।এবার কণ্ঠসঙ্গীতে মিহির লালা, যন্ত্রসঙ্গীতে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মিয়া, নাট্যকলায় এস এম মহসীন, লোকসংস্কৃতিতে কাঙ্গালিনী সুফিয়া বেগম, চারুকলায় চন্দ্র শেখর দে, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন এবং নৃত্যকলায় শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়কে এ পদক দেওয়া হয়।রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে তাদের হাতে পদক, সনদপত্র ও এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন।সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে মিহির লালা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।পরে রাষ্ট্রপতি শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় ‘অ্যক্রোবেটিক শো’ দেখেন।