দেশে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এদেশে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এত রক্ত ১৯৭১ সাল ছাড়া এদেশে আর কখনও ঝরে নাই। সোমবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে রক্তাক্ত হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছিলাম, তখন রক্ত ঝরিয়েছে। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির পর যখন আন্দোলন করেছিলাম, তখনও রক্ত ঝরিয়েছে। এবার যে রক্ত ঝরছে তা সত্যিকার অর্থে ইতোপূর্বে আর কখনও ঝরেনি। একটা সভ্য দেশে বিনা বিচারে ভয়ঙ্করভাবে মানুষ হত্যা করা হবে, এটা কল্পনা করা যায় না।
চলমান মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে মাদকদ্রব্য সেবন করে বা কে মাদকের ব্যবসা করে সেটা আমাদের প্রশ্ন নয়। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের বিচার করা হচ্ছে না কেন?আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আপনার ঘরে যারা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত, যারা মাদক স¤্রাট নামে পরিচিত, তাদের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিচ্ছেন না। আপনারা দেখেছেন, চট্টগ্রামের কমিশনার, যার ব্যাপারে এলাকাবাসী বলেছেন, অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সে তিনবার নির্বাচিত হয়েছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কাদের ইঙ্গিতে হত্যা করা হচ্ছে? কারা এই তালিকা তৈরি করেছে? বাংলাদেশে আগাম কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটাকে মাদকবিরোধী অভিযান বললে ভুল হবে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে।চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনও ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা।তিনি বলেন, দেখুন না প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে তাদের বিচার হচ্ছে না কেন? কারা আজকে বাংলাদেশে একটা নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য, অন্য কোনো কিছু আগাম সৃষ্টি করার জন্য এটা করা হচ্ছে কিনা- এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
এটাকে যদি শুধু আমরা মাদকবিরোধী অভিযান মনে করি তাহলে ভুল হবে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে, এর পেছনে নিশ্চয় আরো একটা ভিন্ন ধরনের চক্রান্ত রয়েছে, যা করে করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ টিকে আছে। দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সোমবার আট জেলায় আরও অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এনিয়ে গত নয় দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ জনে।নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার কথা জানানো হলেও এখন গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর দিয়ে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলিতে মারা পড়ছেন তারা।সমালোচনার মধ্যেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ যুদ্ধে নেমেছেন, নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।শনিবার মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক নিহত হন।
ওই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সেই এলাকার সমস্ত মানুষ বলেছে যে, পৌরমেয়র একজন নিরীহ ভালো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন যে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। সে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন।কাদের ইঙ্গিতে এই হত্যা করা হয়েছে। কারা এই তালিকা তৈরি করেছে ?সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার ঘরকে সুন্দর করে রেখে দিয়েছেন। আপনার ঘরে যারা মাদক স¤্রাট হিসেবে পরিচিত, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত তাদের গায়ে আপনি ফুলের টোকাও দিচ্ছেন না।সংগঠনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিনের সভাপতিত্বে ও গাজী রেজওয়ান-উন হোসেন রিয়াদের পরিচালনায় সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মসিউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বক্তব্য দেন।