‘সমকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকেরা সমবেত শক্তি’ স্থানীয় বাজারের পোষাক শিল্প শ্রমিকদের সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, এমপি আজ সকাল ১০ টায় দি ডেইলি স্টার সেন্টার এর এ.এস মাহমুদ হলে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এর আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ লেবার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জেড এম কামরুল আনাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি উপাস্থাপন শেষে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন ধারণকৃত স্থানীয় বাজারে উৎপাদনকারী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একটি ভিডিও তথ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
এর পর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘তিনি নিজেও অনেকদিন সরাসরি ট্রেড উইনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন শ্রমিকদের সাথে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিকেদের ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা নেই। অপরপক্ষে ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ে মালিকদের মধ্যে এক ধরণের ভীতি কাজ করে যার কারণে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হলে তাদের চাকুরীচূত করা হয়। বর্তমানে এ অবস্থা চলমান। ট্রেড ইউনিয়নের লক্ষ্য হওয়া উচিত শ্রমিকদের উন্নয়নে নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য একযোগে কাজ করা। সমকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকেরা সমবেত শক্তি কিন্তু ফেডারেশনের সংখ্যা বেশী হওয়ায় নিজেরা বিভক্ত হয়ে যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা, ততটা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক হতে হবে এবং আন্দোলন করার সময় মালিক এবং ফ্যাক্টরী যেন কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখতে হবে।’

স্থানীয় বাজারের পোষাক শিল্প শ্রমিকদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের সভাপতি জাকির হোসেন পান্নু বলেন, কেরানীগঞ্জে সকল ফ্যাক্টরীতে পিচ রেটে কাজ করানো হয়ে থাকে, মালিকেরা সারা বছরের মজুরীর একটা বৃহৎ অংশ ঈদের আগে চাদ রাতে দেবে বলে বকেয়া রাখেন কিন্তু শেষ ঐ রাতে বকেয়া টাকার সম্পূর্নটা কখনওই পরিশোধ করে না। সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ও দর্জি কল্যাণ ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াসিম বলেন, সৈয়দপুর গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের স্বল্প বেতনের কারণে কারখানার ভেতরেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত্রি যাপন করছে।

ফেয়ার ওয়ার ফাউন্ডেশনের কান্টি রিপ্রেজেন্টেটিভ বাবলু রহমান বলেন, ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার আদায় ও অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিক পক্ষের সাথে কাজ করার জন্য বিএলএফ-কে অনুরোধ করেন। তিনি রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্পের মত ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্পেও নুন্যতম মজুরী নির্ধারণের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহনের জন্য পরামর্শ দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, কাজের ক্ষেত্রে মালিক এবং শ্রমিকদের ওনারশিপ থাকতে হবে। মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে মাস্টার সার্ভেন্ট সোস্যাল রিলেশন এখনও বিদ্যমান। শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে এ সম্পর্কের উন্নয়ন প্রয়োজন। মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন লিডারদের একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।